আর করিম চৌধুরী
বিএনএ ডেস্ক: বিএনএ ডেস্ক: প্রেম ও বিদ্রোহের অমর কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাকে দেয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। এর আগে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৪৫ সালে কাজী নজরুলকে সর্বোচ্চ পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদক প্রদান করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মাননায় ভূষিত করে ।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধেও নজরুলের কবিতা-গান জনগণকে উজ্জীবিত করেছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তিনি লিখে গেছেন ইসলামী গজল আর শ্যামা সংগীত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হয়। শুধু কবিতা ও গানেই নিজেকে সীমিত রাখেননি তিনি; লিখেছেন নাটক-উপন্যাসও। সমৃদ্ধ করেছিলেন বাংলা শিশু সাহিত্যকেও।
কবিতা, গান ও উপন্যাসে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে পরাধীন ভারতে সোচ্চার ছিলেন কাজী নজরুল। কবিতা লিখে জেলও খেটেছেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৯১৭ সালে কাজী নজরুল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯২০ সালের মার্চ অবধি যুদ্ধের ময়দানে সক্রিয় ছিলেন। ১৯২১ সালের নভেম্বরে মুজফ্ফর আহ্মদের সঙ্গে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন তিনি। এই সময়ে কাজী নজরুল রচনা করেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’, ‘ভাঙার গান’। ১৯২২ সালের শেষদিকে কারাবন্দি হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি গঠন প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি।
তবে ১৯২৬ সালে মুজফ্ফর আহ্মদের অনুরোধে তিনি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সংগীতের অনুবাদ (জাগো অনশন-বন্দি) করেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তার রচিত ‘চল চল চল!/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ বাংলাদেশের রণসংগীত। একের পর এক তিনি লিখেছেন ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘চক্রবাক’, ‘সঞ্চিতা’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘মরু ভাস্কর’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘ভাঙার গান’, ‘সাম্যবাদী’, ‘পুবের হাওয়া’, ‘ব্যথার দান’, ‘রিক্তের বেদন’, ‘বাঁধনহারা’, ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘কুহেলিকা’ ইত্যাদি।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার(২৭ আগস্ট) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো করা হয়।
বিএনএনিউজ