ঢাকা : ইসলামের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আমল হল সালাত বা নামাজ। মুমিন এবং কাফেরের মাঝে বড় পার্থক্য হল নামাজ। নামাজ প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ (বাধ্যতামূলক)। নামাজ ছাড়া ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি অসম্ভব। নামাজ পাপাচার থেকে মুক্ত রাখে। স্বচ্ছ, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন লাভ হয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
আজকের(২৭ জুলাই ২০২৪) নামাজের সময়সূচি
আজ শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ ইংরেজি, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বাংলা, ২০ মহররম ১৪৪৬ হিজরি।
দেখে নিন ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি- ফজর: ৪টা ১ মিনিট * জোহর: ১২টা ০৮ মিনিট * আসর: ৪টা ৪৩ মিনিট * মাগরিব: ৬টা ৪৯ মিনিট * এশা: ৮টা ১২ মিনিট।
ফজর (রোববার, ২৮ জুলাই): ৪টা ১ মিনিট।
বিভাগীয় শহরের জন্য উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগে সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে– বিয়োগ করতে হবে– চট্টগ্রাম: ৫ মিনিট * সিলেট: ৬ মিনিট যোগ করতে হবে– খুলনা: ৩ মিনিট
* রাজশাহী: ৭ মিনিট * রংপুর: ৮ মিনিট * বরিশাল: ১ মিনিট
আজকের(২৭ জুলাই ২০২৪) নামাজের নিষিদ্ধ সময়
শনিবার ঢাকায় সূর্য উদয় ভোর ৫টা ২৬ মিনিটে।
শনিবার ঢাকায় সূর্য অস্ত যাবে সন্ধ্যা ৬টা ৪৪মিনিটে।
সূর্য অস্ত কী ২০২৪?
সূর্যাস্ত। এটার মানে হলো সূর্য ডুবে যাওয়া। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দেখা হিসাবে, বিষুব রৌদ্রটি বসন্ত ও শরৎ উভয়দিকে ঠিক পশ্চিমে সেট করে। ঠিক তখনই পৃথিবী সূর্যের আলো পায় না। এটাকেই আমরা সূর্যাস্ত বলি।
সূর্য উঠার শুরু থেকে হলুদ আলো পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সময়টুকুতে সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ(নামাজের নিষিদ্ধ সময়)।
ফজর নামাজের সময় শুরু হয় সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। আর তা পড়তে হয় সূর্য ওঠার আগে। সুবহে সাদিক হলো- শেষ রাতে পূর্ব আকাশে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখার আভাস দেখা যায়। তা দেখা যাওয়ার পর থেকে সূর্য ওঠার বেশ কয়েক মিনিট (২০-২২) আগে ফজরের নামাজ পড়া শেষ করতে হয়।
এরপর সূর্যোদয়ের সময় ১০-১৫ মিনিট নামাজ পড়া যায় না।
ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো- সূর্যোদয়ের সময় নামাজ আদায় করা নিষেধ। এ সময় ফজরের ফরজ নামাজ বা কোনো কাজা পড়াও সহিহ নয়। পড়লে তা আদায় হবে না। তাই পরে তা কাজা করে নিতে হবে।
সাহাবি উকবা বিন আমের আল জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) আমাদের তিন সময়ে নামাজ এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। ১. সূর্য উঠার সময়, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। ২. সূর্য যখন মাথার ওপর ওঠে তখন থেকে পশ্চিমে হেলে পড়ার সময়টুকু। ৩. এবং সূর্য হলুদবর্ণ হওয়ার পর থেকে ডোবার আগ পর্যন্ত।’ বুখারি, হাদিস নম্বর ৫৫১ এবং মুসলিম, হাদিস নম্বর ১১৮৫।
নামাজের নিষিদ্ধ সময়: সূর্য ডোবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আপনি ওই দিনের আসরের সালাত আদায় করতে পারবেন। কিন্তু সূর্য ডুবে যাচ্ছে এমন সময় আপনি সালাত আদায় করবেন না। যেমনিভাবে আপনার জন্য জায়েজ রয়েছে, সূর্য উদিত হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আপনি ওই দিনের ফজরের সালাত আদায় করতে পারবেন। কিন্তু আপনি দেখছেন সূর্য উদিত হচ্ছে, এমন সময় অন্য কোনো সালাত আদায় করতে পারবেন না।
যদি কেউ নামাজ পড়ে জানতে পারে, ওয়াক্ত হবার পূর্বেই নামাজ পড়েছে, তবে সেই নামাজ আদৌ আদায় হবে না, পুনরায় পড়তে হবে। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ওয়াক্ত বা সময় হওয়া জরুরি। ওয়াক্তের আগে কখনই নামাজ আদায় হবে না।
ইসলামে নামাজের গুরুত্ব
ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরীসীম। নামাজ আদায় না করলে তাকে কীভাবে মুসলমান বলা যাবে ?
আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল (কাফেরের মতো কাজ করল)।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮২)
অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২১)
নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি বাহ্যিক নিদর্শন। আর নামাজ ছেড়ে দিলে— মুসলিমের থেকে ইসলামের বড় কিছু ছুটে যায়। তাই উমর (রা.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের।’ (বায়হাকি, হাদিস : ১৫৫৯, ৬২৯১)
এছাড়াও ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১)
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১)
তারা প্রত্যেকে নামাজ না পড়ার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উল্লেখ করেছেন। তারা বলতে চেয়েছেন যে, নামাজ পরিত্যাগ করা কাফেরদের কাজ। যে মুসলমান নামাজ পড়ল না— সে যেন কাফেরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কাজ করল।
আল্লাহর জিম্মাদারি বেরিয়ে যাওয়া ও সবকিছু হারানো
ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তার জিম্মাদারি বা রক্ষণাবেক্ষণ তুলে নেন। মুআজ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহতায়ালার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৫/২৩৮)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নামাজের গুরুত্ব বুঝে ৫ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র: সংগৃহীত।
এসজিএন