বিএনএ, ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫২তম জন্মদিন আজ। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অবরুদ্ধ ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর তার নাম ‘জয়’ রাখেন নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এ দু’জনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নৈপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করছেন পরিশ্রমী, মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন জীবন-জীবিকার অধিকারী কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠান।
মেধা ও তারুণ্যের প্রতীক জয় বাংলাদেশের খ্যাতনামা পরমাণুবিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারের নিহত হওয়ার সময় বাবা এমএ ওয়াজেদ মিয়া ও মা শেখ হাসিনার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন সজিব ওয়াজেদ জয়।
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে লন্ডন হয়ে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে চলে আসেন জয়। সেখানেই শৈশব-কৈশোর কেটেছে তার। ভারতের নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক শেষ করেন জয়। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বাস করছেন তিনি।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর রূপকার হিসেবে খ্যাত সজীব ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ধারণাটি যুক্ত হয়েছিল। দেশের মানুষ এই ধারণা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর বিগত তিন মেয়াদে মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন সচিব ওয়াজেদ জয়।
লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত থাকলেও জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয় তাকে, যার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে আসেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করেন তিনি। যা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝেও বেশ ভালো প্রভাব সৃষ্টি করে।
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে দায়িত্বশীল পদপ্রাপ্তি নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। নেতাকর্মীরা তাকে দায়িত্বশীল পদে দেখতে চেয়ে দাবিও তোলেন। কিন্তু তখন দলের সরাসরি পদের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর অবৈতনিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয় সচিব ওয়াজেদ জয়কে। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর তাকে একই পদে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম কর্তৃক ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নির্বাচিত হন জয়।
সজিব ওয়াজেদ জয় ২০০২ সালে ২৬ অক্টোবর মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন। সোফিয়া ওয়াজেদ নামে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তবে জীবন আড়ম্ভরপূর্ণ ও কর্মমুখর হলেও জয় বরাবরই জন্মদিন পালন করেন অনেকটা নীরবে, আড়ম্বরহীনভাবে। দেশে থাকলে দিনটি কাটান মায়ের সান্নিধ্যে। আর যুক্তরাষ্ট্রে থাকলে পান মায়ের শুভেচ্ছাসিক্ত ফোন। বরাবরের মতো এবারও তার জন্মদিন উপলক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নেই।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ঘরোয়া পরিবেশে জয়ের জন্মদিনের কেক কাটা হবে বলে জানা গেছে। এ অনুষ্ঠানে মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জয়ও উপস্থিত থাকবেন।
জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগ আজ বিকেল ৪টায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে বৃক্ষরোপণ এবং বাদ আছর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নিচতলায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। পরে গরিব-দুস্থদের মাঝ খাবার বিতরণ করা হবে।
খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ দুপুরে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা ও তার সু-স্বাস্থ্য কামনায় দোয়ার আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এছাড়াও জয়ের জন্মদিনে দেশব্যাপী মসজিদে মসজিদে দোয়া এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনার অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনএ/এমএফ