22 C
আবহাওয়া
১২:০৫ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বেনজীরের আরও ১১৩টি দলিলের সম্পদ ও গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট জব্দ

বেনজীরের আরও ১১৩টি দলিলের সম্পদ ও গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট জব্দ


বিএনএ, ঢাকা : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা আরও ১১৩টি দলিলের সম্পদ এবং গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানিতে তাঁদের নামে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেন ২৬শে মে রোববার এ আদেশ দেন।

YouTube player

এর আগে গত ২৩ শে মে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা) জমি জব্দ এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে তাঁদের নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একই আদালত।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

দুদক ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান আবাসিক এলাকার র‍্যাংকন আইকন টাওয়ারে চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে সাভান্না ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের নামে। গত বছরের ৫ মার্চ এক দিনে চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়। চারটি ফ্ল্যাটের মধ্যে তিনটি সাভান্না ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে। অপর ফ্ল্যাটটি বেনজীর আহমেদের ছোট মেয়ের নামে। এর বাহিরে ঢাকার অদূরে সাভারে তিন কাঠা জমি রয়েছে এই পরিবারের। ওই জমি কেনা হয় ২০১২ সালের ২১ জুন।

আদালতে জমা দেওয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদারীপুরের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজায় বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে ১১৩টি দলিলে মোট অন্তত ২৭৬ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৬ আগস্টের মধ্যে এসব জমি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় আরও পাঁচ কাঠা জমি কেনা হয়েছে বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে।

বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের কোন কোন কোম্পানিতে অংশীদারিত্ব রয়েছে, সেই তালিকাও আদালতের কাছে তুলে ধরেছে দুদক। দুদক আদালতকে জানিয়েছে, সোনালী ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে এই পরিবারের। শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স হিসাব রয়েছে। লংকা সিকিউরিটিজ লিমিটেডেও বেনজীর আহমেদের নামে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স হিসাব রয়েছে। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধিত সাভান্না ন্যাচারাল পার্ক প্রাইভেট লিমিটেড, সাভান্না অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভান্না ইকো রিসোর্ট এবং একটি শিশির বিন্দু লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর শতভাগ মালিকানা এই পরিবারের সদস্যদের। এসব কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া নর্থ চিকস রংপুর লিমিটেড, নর্দান বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, সেন্ট পিটারস স্কুল অব লন্ডন লিমিটেড, স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বাংলা টি ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ডেল্টা আর্টিসান্স লিমিটেড, ইস্ট ভ্যালি ডেইরি লিমিটেড, গ্রিন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠানে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের আংশিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের পরিবারের শেয়ারগুলো অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার যে ৮৩টি দলিলের অধীনে থাকা সম্পত্তি জব্দ করেছে তাতে মোট জমি রয়েছে প্রায় ১১৪ একর বা ৩৪৫ বিঘা। এর মধ্যে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে অন্তত ৮১ একর বা ২৪৫ বিঘা জমি রয়েছে। বেনজীরের নিজের নামে জমি রয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৬০ একর বা ২৩ বিঘা। বাকি প্রায় ২৬ একর বা ৭৯ বিঘা জমি রয়েছে তাঁর তিন মেয়ে ও কয়েকজন স্বজনের নামে।

বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। গত ৩১ শে মার্চ প্রকাশিত প্রথম পর্বের মূল শিরোনাম ছিল ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’। দ্বিতীয় পর্ব প্রচার করা হয় ২রা এপ্রিল। এই পর্বের মূল শিরোনাম ছিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’।

কালের কন্ঠের প্রতিবেদনের পর ২০ এপ্রিল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন বেনজীর আহমেদ। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, তাঁর পরিবারের যে সম্পদ রয়েছে, তা বৈধ এবং এর হিসাব ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ রয়েছে। অবৈধ যেসব সম্পত্তির কথা বলা হচ্ছে, তা কেউ প্রমাণ করতে পারলে ওই ব্যক্তি বা গ্রুপকে সেই সম্পত্তি তিনি বিনা পয়সায় লিখে দেবেন বলেও ভিডিওতে দাবি করেন।

কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে একে একে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায় পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকার এই সব সম্পদ অর্জন করেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন এই অবৈধ সম্পদ অর্জনকারি বেনজীরের দায় নিবে না সরকার। ফলে এক সময়কার পুর্নিমার ঝলমলে আলোতে আলোকিত এই দাপুটে পুলিশ প্রধানের জীবনে নেমে এসেছে অমাবস্যার অন্ধকার। সেই সঙ্গে পুলিশের চাকুরির সুবাদে পাওয়া আলাদীনের চেরাগটিও নিভে যাচ্ছে বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচ.এম/হাসনা

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ