বিএনএ ঢাকা: প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ডাক বিভাগের গ্রাহক সেবা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনলাইন ক্রয় বিক্রয় জনপ্রিয় হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক বিভাগকে পিছিয়ে থাকলে চলবে না।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) গণভবন থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাক অধিদপ্তরের নতুন ডাক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ডাক বিভাগের কর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনেক অবদান আছে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভেঙ্গে পড়া ডাক ব্যবস্থাকে ঠিক করার কাজে হাত দেন। বর্তমান সরকার মানুষের কাছে ডাক সেবা পৌঁছে দিতে ডাক বিভাগের আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।সেইসঙ্গে ডাক বিভাগের কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এজন্য আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের সেবায় কাজ করতে ডাক বিভাগের প্রতি নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ডাকের সিস্টেমটা শুধু ডিজিটালাইজড করা না, এটি আরও মানুষের সেবা যাতে দিতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ১১৮টি মেইল গাড়ি সংযোগ করা হয়েছে। গাড়ি চালানোর জন্য নারী-পুরুষদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানো বিশেষ করে যেগুলো পচনশীল পণ্য সেগুলো পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে এয়ার কুলিং সিস্টেম যাতে থাকে অর্থাৎ কোন তাপমাত্রায় কোন ধরনের ফলমূল তরি-তরকারি বা কোনও পণ্য ভালো থাকবে সেই ধরনের গাড়ি কিনে ডাকের মাধ্যমে মানুষ যেন তাদের পণ্যগুলি পায় সেই ব্যবস্থাটাও নিচ্ছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন,সরকার সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ৫ হাজার ২২৭ টির মতো ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জায়গায় ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হয়। কিন্তু প্রথমে ডাকঘরগুলো যেন আধুনিক করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ডিজিটাল সেন্টার নির্মাণ করায় উদ্যোক্তা মহিলা ও পুরুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নতুনভাবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ধরনের সেবা সেখান থেকে নিতে পারছে। ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেবা নিচ্ছে এখন ডাকঘর ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র থেকে সেবা নিতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের পর এখন বেশিরভাগই অনলাইনে ক্রয় বিক্রয় চলছে। পচনশীল জিনিস অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল তরিতরকারি এগুলো যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায় সেজন্য কুলিং সিস্টেমটা খুব দরকার। সেই ধরনের তাপমাত্রা বা কুলিং সিস্টেম করে দেয়া যাতে সেখানে এই জিনিসটা নষ্ট না হয়। আর যার হাতে যাবে, পৌঁছাবে সেই পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেয়া। সেখানে প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত এরকম সেন্টার থাকবে। আর সেখান থেকে যারা নিয়ে যাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের কুলিং সিস্টেমের ছোট ছোট পোর্টঅ্যাবল বক্স ব্যবহার করে পৌঁছে দিতে পারবে। সেভাবেই কিন্তু ডাকের সেবাটিকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটাই এখন ডাক বিভাগকে নিতে হবে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সরকার ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। এখন আধুনিক সুন্দর ভবন হয়ে গেল। ইতোমধ্যে ৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণকাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য সারাদেশে এটি করে দিতে পারলে, মানুষ ঘরে বসে অনেকে কাজ করে পয়সা উপার্জন করতে পারবে। মানুষের কর্মসংস্থান যেমন হবে মানুষ সেবাটাও পাবে। ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের রূপরেখার আওতায় সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করছে। চুক্তি হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক। যেহেতু অনলাইন করায় বিক্রয় জনপ্রিয়তা লাভ করছে, কাজেই ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন সরকার প্রধান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সে সময় ডাক ভবনে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ ।পরে, ডাক বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক এই ক্ষণ উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিন্দন এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২টি বেজমেন্টসহ ১৪ তলা ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের সদরদপ্তর শীর্ষক প্রকল্পটি গত ২০ মার্চ ২০১৮ তারিখ একনেকে অনুমোদিত হয়। নবনির্মিত ডাক ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এবং সার্বক্ষণিক ওয়াইফাইসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রাখা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/আরকেসি,এসজিএন