বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আলিম চৌধুরী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম। শহীদ ডা. আব্দুল আলিম চৌধুরী ১৯২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার খয়েরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ হাই স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএসসি পাশ করে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬১ সালে লন্ডন থেকে ডিও ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দেশে থেকেই বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ‘যাত্রিক’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করতেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ ডা. আলিম চৌধুরীকে রাজাকার-আলবদর বাহিনী তাঁর বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং ঐদিন রাতে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ ‘শহীদ ডা. আব্দুল আলিম চৌধুরী ছাত্রাবাস’ করা হয়েছে।
১৯৫১-১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে তিনি জি.এস প্রার্থী ছিলেন। ভাষা-আন্দোলনে দল মতের উর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন ঐক্যবদ্ধভাবে। জয়ী জি.এস. শরফুদ্দিনের সাথে তিনি ছুটে যান কাদের সর্দারের কাছে ভাষা-আন্দোলনে পুরানো ঢাকাইয়া জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্যে। তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১৯৪৮ সালের ব্যাচের ছাত্র। থাকতেন ১২ নং ব্যারাকের ৬ নং কক্ষে।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি হলে ছাত্র সমাবেশে বক্তৃতা, রাতে গোলাম মাওলার রুমে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সভায় যোগদানসহ আলিম চৌধুরী ব্যস্ত হয়ে যান বিভিন্ন কাজে। একুশের আন্দোলনে বিভিন্ন পর্বে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের তিনি অন্যতম কর্মী ছিলেন। তাঁর ব্যারাকের একটু সামনেই শহীদ হন আবুল বরকত আর সেখানেই নির্মিত হয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।
ভাষা-আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা পালনকারী একাত্তরে শহীদ এই মহান বুদ্ধিজীবীকে বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক (১৪) আবদুল হক, ব্যারিস্টার