বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধের একমাস পার হয়ে গেছে। যদিও সেই যুদ্ধে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায় নি রাশিয়া, কিন্তু রাশিয়ার গুপ্তঘাতকরা দেশ জুড়ে কর্মকাণ্ড চালাতে শুরু করেছে, সেই সন্দেহ ইউক্রেনের বাসিন্দাদের মধ্যে জোরালো হয়ে উঠেছে। যদিও গোয়েন্দা তথ্যে প্রায়শ এসব বিষয় উঠে আসছে, গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটছে, কিন্তু এই সন্দেহের কতটুকু বাস্তবতা আছে? ইউক্রেনের সামাজিক মাধ্যমে রহস্যময় লাল বাতি আর তীর চিহ্নের কথা ছড়িয়ে পড়ছে, তারই বা ভিত্তি কতটা আছে?
”আমার প্রতিবেশীরা কয়েকদিন আগে এই সিঁড়ি উঠে আমার বাসায় এসেছিলেন। তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন,” বলছিলেন ২২ বছর বয়সী প্রকৌশলী বোহডান মিলকো। ওডেসার উপকণ্ঠে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে তিনি বসবাস করেন।
ওই ঘটনার ১৫ মিনিট পরেই পুলিশ এসে তার দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে। তারা জানতে চায়, বোহডান জানালায় কোন লাল বাতি জ্বালিয়েছিলেন কিনা।
”রাশিয়ানদের জন্য লাল বাতি হচ্ছে একটা সংকেত বিশেষ, এরকম একটি খবর ছড়িয়ে পড়ার কারণে তাদের মধ্যে অকারণ ভীতি তৈরি হয়েছিল। আমাকে তখন পুলিশ স্টেশনে যেতে হয় এবং আমার কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়। সেখানে আমার লিখিত বক্তব্য এবং ছবি তুলে রাখা হয়,” বলছিলেন মিলকো।
তিনি তার বাসায় ঘর সাজানোর কিছু রঙ্গিন বাতি সংবাদদাতাকে দেখান, যা দেখেই তাকে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল।
”পুলিশ বলতে পারে, আমি সাধারণ একজন ব্যক্তি এবং আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি রাশিয়ানদের সহায়তা করতে কোন কাজ করিনি,” তিনি বলছেন।
তার সঙ্গে কথা শেষ করে সাংবাদিক দলটি যখন ফিরছিল, একটি সড়কে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা তাদের পথরোধ করে। তারা কাগজপত্র দেখতে চায়।
”আপনারা রাশিয়ার লোকজন হতে পারেন,” ভালয়া নামের একজন বয়স্ক নারী মন্তব্য করেন।
”আপনারা এখানে কি করছেন? আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে। তাদের কিছু হোক, আমরা চাই না। হয়তো আগামীকাল আমাদের এখানে কেউ একজন একটা বোমা রেখে যাবে,” বলছিলেন আরেকজন নারী।
যখন এই আলাপ চলছিল, তখন অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ওপরে বিমান হামলার সতর্কীকরণ সাইরেন বাজতে শুরু করেছে। রাশিয়ার হামলার মধ্যে থাকা ইউক্রেনের নানা শহর এবং পুরো দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই উদ্বেগের কারণ বোঝা তেমন কঠিন নয়।
সিরিয়া যুদ্ধ থেকে চেচনিয়ার যুদ্ধ- অনেক যুদ্ধেই এরকম চিত্র দেখা গেছে।
”একে অকারণ ভীতি বলা যায় না। পুরো ইউক্রেন জুড়েই রাশিয়ার এজেন্ট এবং নাগরিকরা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এটাই বাস্তবতা,” বলেছেন ওডেসা শহরের পুলিশ ক্যাপ্টেন ভলোদামির কালিনা।
কিন্তু তিনি এটাও স্বীকার করেন, এখন অনেক বিভ্রান্তিও ছড়ানো হচ্ছে। জনগণের মধ্যে এরকম অকারণ ভীতি আর বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য তিনি রাশিয়াকেই দায়ী করেন।
”তারা আমাদের বিভ্রান্ত করতে চায়, যাতে ভুল জায়গায় আমাদের মনোযোগ চলে যায়। শহরের কোন একদিকে আমাদের টেনে নিয়ে যেতে চায়, যাতে অন্য আরেক জায়গায় তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে পারে,” তিনি বলছেন।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।