বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর। আজ থাকছে বান্দরবান আসনের হালচাল।
দেশের ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার প্রান্তে অবস্থিত দেশের শেষ আসন খ্যাত পার্বত্য বান্দরবান আসনটিতে ৩৩টি ইউনিয়ন, ৭ উপজেলা ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ।এটি জাতীয় সংসদের ৩০০ তম আসন। এই আসনে ১৭৬টি কেন্দ্র ও ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার। ভোটারদের বড় অংশ আদিবাসী পাহাড়ি।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫ শত ২৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৪২ হাজার ৫ শত ৬২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৭ হাজার ৬ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর আমিনুল হক আজাদ। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৭ হাজার ৬ শত ৪৩ ভোট ।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।এই নির্বাচনে বিএনপির সা চিং প্রু কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ১ শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৮ হাজার ৮ শত ৬০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৪ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সা চিং প্রু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৪ শত ৮২ ভোট।
২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩ শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১ হাজার ৪ শত ৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৫ শত ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ম্যা মা চিং। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ৬ শত ৯৭ ভোট।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯ শত ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩ শত ৯০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৯ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সা চিং প্রু । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ১ শত ৭৪ ভোট।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৯ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রসন্ন কান্তী তঞ্চগ্যা। ঘড়ি প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ২৯ ভোট।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬ হাজার ৬ শত ৩১ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সাচিং প্রু এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শওকতুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সাচিং প্রু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫৮ হাজার ৭ শত ১৯ ভোট।
কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শুধুমাত্র ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম,সপ্তম,অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বান্দরবান আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বান্দরবান সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ২৮.৪৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৪৯%, বিএনপি ১৭.৯২%, জাতীয় পার্টি ৭.৬৬%, জামায়াত ইসলামী ১৭.৯৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৪.৯৭% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৯.২৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫০.০৭%, বিএনপি ৩৬.১২%, জাতীয় পার্টি ২.০৩% জামায়াত ইসলামী ১১.৩০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.১৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.০০%, ৪ দলীয় জোট ৩৮.১৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২২.৮৪% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.২৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.৮১%, ৪ দলীয় জোট ৩৮.০৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.১১% ভোট পায়।
বান্দরবান- আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।
বিএনপি নির্বাচনে তফসিল প্রত্যাহার করে সরকার পতনের আন্দোলন করে যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা না করার বিষয়ে এখনো অনড়। তবে বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি সাচিং প্রু জেরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় উপজাতীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ম্যামাচিং এর নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক শওকত জামান মিশু, বান্দরবান জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আলহাজ কাজী মোহাম্মদ নাসিরুল আলম ।
আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউপিডিএফ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দল দুটি তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পার্বত্য জেলা বান্দরবান আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। । শুধুমাত্র ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন ধেকে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর বাহাদুর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অর্থাৎ তিনি ডবল হ্যাট্রিক করেছেন সংসদ সদস্য হিসাবে। পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং শহর থেকে শুরু করে দুর্গম পার্বত্য জেলার এলাকায় আনাচে-কানাচে প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দেন। তিনি পাহাড়ি ও বাঙ্গালি উভয় সম্প্রদায়ের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
দীর্ঘদিন ক্ষমতা বলয়ের বাহিরে অবস্থান করায় বিএনপির রাজনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা রয়েছে। তার ওপর ভর করেছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। রাজপরিবারের দুই সদস্যের বিরোধের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপির রাজনীতি।
পাহাড়ের এই জনপথে আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জনসংহতি সমিতি জেএসএস ও ইউপিডিএফ। তাছাড়া রয়েছে বাঙালি নাগরিক পরিষদ। এই সংগঠনটি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা ব্যক্তি কেন্দ্রিক। দুই গ্রুপে বিভক্ত। কালে ভাদ্রে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা দেখা যায়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৩০০তম সংসদীয় আসন (বান্দরবান) আসনটিতে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনএ / শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ