বিএনএ ডেস্ক: স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন নিহত মেরাজুল ইসলামের স্ত্রী নাজমীম ইসলাম। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করা হয়।
এছাড়াও মামলায় রংপুর জেলা পুলিশ সদস্য ও অন্যান্য ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। রোববার (২৫ আগস্ট) বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলা গ্রহণ করে বিচারক রাজু আহমেদ রাজু মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানাকে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শরিফুল ইসলাম জানান, আগের মামলার সঙ্গে একীভূত করে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এর আগে গত ১৮ আগস্ট একই আদালতে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেন নিহত মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন। ওই মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে ফুট ওভার ব্রিজের নিচে কলা ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মেরাজুল ইসলামের স্ত্রী নাজমীম ইসলামের দায়ের করা মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মনিরুজ্জামান, সাবেক রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উৎপল কুমার পাল, সহকারী কমিশনার আল ইমরান, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান আরিফ, সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলম, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত হোসেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশীদ, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিন, জেলা যুবলীগের সভাপতি লক্ষিণ চন্দ্র দাস, যুবলীগ নেতা ন্যাংড়া মামুন, আওয়ামী লীগ নেতা নবিউল্লাহ পান্নাসহ অন্যরা।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রোববার দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি আমলি আদালতে আরও একটি মামলা করেছেন দোকান শ্রমিক মমদেল হোসেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায় ও নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য অপু উকিল, সাবেক বিচারপতি শামসুজ্জামান চৌধুরী মানিক, সাবেক বিচারপতি আক্তারুজ্জামান, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মনিরুজ্জামান, রংপুর জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান, বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) উত্তম কুমার পাল, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার রায়সহ রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের ৪৫১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ জনকে।
মামলার আবেদনে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুর সিটি বাজার এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে বাদী মমদেল হোসেনের বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ গুড়ো হয়ে যায়। এছাড়া হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। পরে তাকে রংপুর থেকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ও হাতের আঙুল কেটে ফেলা হয়। ওইদিন ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান অন্তত পাঁচজন। শেখ হাসিনাসহ উল্লেখিত ১৪ জনের নির্দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন তান্ডব চালিয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী আন্দোলনের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ