বিএনএ ডেস্ক: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫২ লাখ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের এবং নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। এমন পরিস্থিতিতে ওই সব বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণ বিতরণকারীদের কাছ থেকে ওরাল স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পেলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এছাড়া বেড়েছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা।
রবিবার (২৫ আগস্ট) ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, বন্যার মধ্যে গত ৩ দিনে নোয়াখালীতে ৬৩ জনকে সাপে কেটেছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাপে কেটেছে ২৮ জনকে। বন্যার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০৮ জন। বন্যাকবলিত অন্য এলাকাগুলোর পরিস্থিতিও এমন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয় ও জন্ডিসসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পানিবন্দি থাকা অনেকে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে নবজাতক, শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। এছাড়া সাপে কাটার শঙ্কাও রয়েছে। শুধু এখনকার সংকটই নয়, বন্যার পানি নেমে গেলে রোগবালাই আরো বাড়বে। তাই এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
এদিকে গত ২২ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১ হাজার ১৯৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আক্রান্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং হাসপাতালগুলোতে জরুরি মেডিকেল টিমসহ পর্যাপ্ত ওরাল স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন এবং অ্যান্টিভেনমসহ অন্যান্য জরুরি ওষুধ মজুত আছে। আক্রান্ত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই কোথাও কোথাও ফিল্ড হাসপাতালও প্রস্তুত করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান জানান, বন্যার্ত এলাকায় সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা
নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরাল স্যালাইনের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা। আরো বরাদ্দের জন্য ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বন্যার সময় বা পরে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বন্যাকবলিত এলাকায় এখন রোগীর সংখ্যা কম মনে হচ্ছে। কিন্তু বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ যখন নিজের বাড়ি ফিরতে শুরু করবে, তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, প্যারা-টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ও ফুড পয়জনিংসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিতে পারে। হতে পারে চর্মরোগ। এই বন্যার সময় পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এক্ষেত্রে বাড়তি সচেতনতা দরকার।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ