29 C
আবহাওয়া
১:১৩ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বেনজির-আজিজের সুতা কেটে গেছে!

বেনজির-আজিজের সুতা কেটে গেছে!

বেনজির-আজিজের সুতা কেটে গেছে!

বিএনএ, ঢাকা: বেনজীর আহমেদ। সাবেক র‌্যাব ও পুলিশের প্রধান। এক সময়কার দাপুটে বেনজীর আহমেদ এখন অনেকটা চুপসে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তার সম্পদের পাহাড় নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে ভালো মানুষ হিসাবে পরিচিত গোপালগঞ্জের নাগরিক বেনজির আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সম্পদের ৮০টি দলিল জব্দের পাশাপাশি ফ্রিজ করতে বলা হয়েছে পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। গত বৃহস্পতিবার দূর্নীতি দমন কমিশনের এক আদেশে আদালত এ নির্দেশ দেয়।

এর তিনদিন আগে মঙ্গলবার সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদও তার পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ব্যাপারে শুক্রবার সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুদক স্বাধীন। সেখানে যদি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয় কেউ, আমরা তাকে কেন প্রোটেকশন দিতে যাব? তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যে কেউ কেউ পাল্টা মন্তব্য করেছেন, সুতা কোথাও কেটে গেছে! বড্ড একা হয়ে গেছেন দেশের এক সময়কার প্রভাবশালী শীর্ষ আমলারা।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও র‍্যাব’র মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পত্তির বিষয়টি যখন সামনে তখন বিস্ময় তৈরি হয়।

গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত কালের কণ্ঠের রিপোর্টের শিরোনাম ছিল- ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ইকো রিসোর্ট। এই রিসোর্টের পাশে আরও ৮০০ বিঘা জমি কিনেছে তার পরিবার। এছাড়া পাঁচ তারকা হোটেলের ২ লাখ শেয়ারও রয়েছে তাদের।

গত ২ এপ্রিল প্রকাশিত রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’। আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও বেনজীরকে নিয়ে রিপোর্ট প্রচার ও প্রকাশ করে। একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে এতো সম্পত্তির মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। যদিও তিনি এসব সম্পত্তির মালিক হিসেবে দেখিয়েছেন তার স্ত্রী ও কন্যাদের।

বেনজীর আহমেদ ফেসবুক ব্রিফিং-এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার মতো করে ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু অনেকের কাছেই মনে হয়েছে তার কণ্ঠ ক্ষীণ। তদন্তের দাবি উঠে বেনজীরের বিরুদ্ধে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমন বিষয়টি তদন্ত করার চিঠি দেন দুর্নীতি দমন কমিশনে। রিট করেন হাইকোর্টে। পরে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের কথা জানান দুদক। গঠন করা হয় কমিটি। দুদকের আবেদনেই আদালত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন।

বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নেওয়া ব্যবস্থায় অনেকেই কিছুটা বিস্ময়ের পাশাপাশি আশাবাদও প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, দুদক এর মাধ্যমে ভালো উদাহরণ তৈরি করতে পারে।

আবার অন্য একটি মত হচ্ছে, এই অনুসন্ধান নিয়ে এখনই আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই। অতীতেও দুদক রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে বেশ কিছু ইস্যুর ফয়সালা প্রয়োজন। এক. বেনজীর আহমেদের সম্পত্তির পরিমাণ কত? দেশের বাহিরেও তার সম্পত্তি রয়েছে কি-না? দুই. তার স্ত্রী-কন্যা ছাড়াও অন্য কারও নামে তার সম্পত্তি রয়েছে কি-না? তিন. কীভাবে এতো বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন? চার. এসব ব্যাপারে যথাযথ প্রমাণ হাজির করা।

বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি সাবেক সেনা প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের বিষয়টি নিয়েও বিপুল আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস আইনের 7031(সি) ধারার আওতায় আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ আইনের 7031 ধারাটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বাজেট স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দমন নিয়ে। ধারাটির ‘সি’ অংশে সরকারি দুর্নীতি ও মানবাধিকার বিষয়ে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত অন্য দেশের কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে, তাহলে অভিযুক্ত সেই সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

সরকারের পক্ষ থেকে আজিজ আহমেদের বিষয়টিকে তার ব্যক্তিগত দায় বলা হচ্ছে। জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ব্যাপারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সুনির্দিষ্ট দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি। এগুলো কীভাবে সংগঠিত হয়েছে সেটিও বলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ‘ব্যক্তিগত দায়’ বা যেটাই বলা হোক এই অভিযোগের কোনো অনুসন্ধান হবে কি-না, কোনো তদন্ত হবে কি-না? এরইমধ্যে বিজিবি প্রধান থাকাকালে তার ভূমিকা নিয়ে একটি তদন্তের বিষয়ও সামনে এসেছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বেনজির আহমেদের পাশাপাশি আজিজ আহমেদের সম্পদ ও দূর্নীতির বিষয়েও অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিবে দুদক।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, আপাতত সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের সুতা কেটে গেছে। ফলে কিছুটা চাপে পড়েছেন আজিজ আহমেদ এবং বেনজীর আহমেদ। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা বিচারের মুখোমুখি হন কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ