বিএনএ,চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আগামীকাল বুধবার (২৬ মে) নাগাদ উড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে বাংলাদেশ উপকূলে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর ফলে দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোবাবিলায় সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)।
মঙ্গলবার (২৫ মে) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে কয়েক দফায় সভা করে ব্যাপক প্রস্তুতিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সভায় বন্দরের সকল সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানগণ সহ মোট ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিভিন্ন সেডে দায়িত্বরত কর্মীদের দায়িত্বও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুত বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের আউটার থেকে বড় জাহাজকে মহেশখালী-কক্সবাজার গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া কর্ণফুলী থেকে লাইটার জাহাজকে সরিয়ে কালুরঘাট-কর্ণফুলী পুরাতন ব্রিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং শিথিল করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের ভিত্তিতে চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। ৪ নম্বর সংকেতের জন্য বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। এ ছাড়া বিপদসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়। মহাবিপদসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়। তখন বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। জেটি, যন্ত্রপাতি ও পণ্যের সুরক্ষার জন্য ১৯৯২ সাল থেকে এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর বিপদসংকেত জারি করেছে। সংকেত বাড়লে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের করণীয় প্রস্তুতি যা যা দরকার আমরা সবই করে রেখেছি। বরং যে প্রস্তুতি ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বাড়লে নিতে হতো সেটি আমরা আগেই নিয়ে রেখেছি। সুতরাং ইয়াস আঘাত হানলেও সেটি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি রয়েছি।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৫টি কমিটি গঠন করেছে। এরমধ্যে দুটি কমিটি (সমুদ্রে) জাহাজ নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে, তিনটি কমিটি (স্থলে) বন্দরের ইয়াস মোকাবিলার কাজ করছে। এছাড়া খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম (০৩১-৭২৬৯১৬)। যে কোন সময় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানা শুরু করলে বা সংকেত বৃদ্ধি পেতে থাকলে দ্রুতই বন্দরের জেটিও খালি করা হবে। আপাতত সীমিত আকারে চলছে জেটিতে কাজ।
সভায় যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:
বার্থিংরত সকল জাহাজকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। জাহাজসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে গমনের জন্য ক্রমাগত মাইকিং কার্যক্রম চালু রাখা। তীরবর্তী সকল ক্রেন একত্রে গ্রুপ করে রাখা। সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা। বার্থিংরত সকল জাহাজকে ডবল মুরিং করে রাখা। সকল জেটি, ইয়ার্ড, লাইটারেজ জাহাজে কার্যক্রম সতর্কতার সহিত পরিচালনা করা। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম এর নিমিত্তে দুটি জাহাজ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/মনির