বিএনএ ডেস্ক: হেফাজতে ইসলামের ৫ সদসের নতুন আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন আহ্বায়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হলেন, আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী, সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী, সদস্য আল্লামা সালাউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী।
সোমবার(২৬ এপ্রিল) ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় এই তথ্য জানান সদ্যঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী।
তিনি বলেন, প্রথমে ৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এর কয়েক ঘণ্টা পর ভোর ৪টার দিকে আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে আল্লামা সালাউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মহিবুল্লাহ বাবুনগরী আগের কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আর নুরুল ইসলাম মহাসচিব ছিলেন। মহিববুল্লাহ বাবুনগরী জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা।
এদিকে, হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির পর রাতেই নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেন বিদ্রোহীরা। এই কথা জানান শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, শিগগিরই আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের নীতি ও আদর্শের হেফাজতে ইসলাম গঠন করা হবে। কওমি ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের নীতি আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
মওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন,২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর কাউন্সিলের নামে একটি সিন্ডিকেট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এটি অবৈধ কমিটি। হেফাজতের মূল লক্ষ্য উদ্দেশকে বিসর্জন দিয়ে এ কমিটি করা হয়েছে। বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে সাড়ে চার মাসের মাথায় এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণাকে স্বাগত জানান তিনি।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্প্রতি তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। এরপর এ সংগঠনটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। একে একে গ্রেফতার হন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। সবশেষ এবার সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
রোববার(২৫ এপ্রিল) রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক সভা শেষে এ ঘোষণা দেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের পরামর্শক্রমে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আগামিতে আবারও হেফাজতের কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর এবং নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতে ইসলামের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ।
আল্লাম আহমদ শফি হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতাকালীন আমীর হলেও এই কমিটিতে তার সব অনুসারীকেই বাদ দিয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।এমনকি আল্লামা আহমদ শফি মারা যাওয়ার মাত্র দুমাসের মধ্যেই তড়িঘড়ি করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি গঠনের কয়েকমাসের মধ্যেই মারা যান মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী। এরপর সংগঠনটির পুরো নেতৃত্ব নিয়ে নেয় যুগ্ম মহাসচিব এবং খেলাফত মজলিস নেতা মামুনুল হক।
প্রথমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তুলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
সর্বশেষ গত ২৬ শে মার্চ দেশজুড়ে ব্যাপক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন হেফাজত ইসলামের অংশটি। পরে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্ট থেকে নারীসহ স্থানীয় জনগণের হাতে আটক হন মামুনুল হক।
আর মামুনুলের রিসোর্ট কাণ্ড নিয়ে চরম বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়ে হেফাজত। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশের রিমাণ্ডে রয়েছেন তিনি।
২০১০ সালে নারী নীতির বিরোধীতা করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আত্মপ্রকাশ করে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসে সংগঠনটি।কিন্তু সাংগঠনিক বিরোধের জেরে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আল্লামা আহমদ শফিকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরদিনেই ঢাকায় মারা যান তিনি। আর এরপরই জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মামুনুল হকের হাতে হেফাজতের নেতৃত্ব চলে যায়। শেষ পর্যন্ত নানামুখী চাপে সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
বিএনএনিউজ/আরকেসি