বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ থাকছে নীলফামারী-২ আসনের হালচাল।
নীলফামারী -২ আসন
নীলফামারী -২ সংসদীয় আসনটি সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৩ নাম্বার আসন।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রিয়াজুদ্দিন আহমদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-১৩ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৮ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৩ হাজার ১ শত ২৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রিয়াজুদ্দিন আহমদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৩ শত ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হাকিম। তিনি পান ১৯ হাজার ৯ শত ৮৯ ভোট।
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আমিন
১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিত হয় রংপুর-২ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩২ হাজার ১শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৬ হাজার ৭ শত ২৬ জন। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আমিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২২ হাজার ৩ শত ৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মুসলিম লীগের জবান উদ্দিন। হারিকেন প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৭ শত ৬৪ ভোট।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দেওয়ান নুরুন নবী নির্বাচিত
১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, নীলফামারী -২। নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪ হাজার ৯ শত ৩৬ জন। জাতীয় পার্টির দেওয়ান নুরুন নবী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৫ শত ৬৮ ভোট। নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিবির সামশুদোহা। চাবি প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৩ শত ৩০ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।
চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেওয়ান নুরুন নবী বিজয়ী
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেওয়ান নুরুন নবী বিজয়ী হন।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সিপিবির সামশুদোহা জয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৫০ হাজার ৯ শত ৯৪ জন। নির্বাচনে সিপিবির সামশুদোহা বিজয়ী হন। তারা প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ২ শত ১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর আব্দুল লতিফ। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ১ শত ৫৪ ভোট।
সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আহসান আহমেদ নির্বাচিত
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩ শত ৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪২ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আহসান আহমেদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৯ শত ৯৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জয়নাল আবেদীন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৪ শত ৬০ ভোট।
অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান নুর বিজয়ী
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২০ হাজার ১ শত ৪৯ জন । ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫ শত ৭৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান নুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৯ শত ৬০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৮ শত ৩৫ ভোট।
নবম সংসদ নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হন আসাদুজ্জামান নুর
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ২ শত ৭৭ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২০ হাজার ৯ শত ২৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান নুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬ শত ২৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর মনিরুজ্জামান মন্টু। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৮২ হাজার ৩ শত ২৪ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত বিজয়ী আসাদুজ্জামান নুর
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী -২আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর বিজয়ী হন। নির্বাচন কমিশন সূত্র অন্যান্য তথ্য প্রদান করতে প্রদান করতে পারেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মত বিজয়ী আসাদুজ্জামান নুর
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী -২ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৭ শত ৩৩ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯শত ১১ জন। প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান নুর, ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াত থেকে বিএনপিতে যোগদান করা মনিরুজ্জামান মন্টু, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনে বাংলাদেশের জহুরুল ইসলাম, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপির রাবেয়া বেগম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান নুর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মনিরুজ্জামান মন্টু । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ২ শত ৮৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নীলফামারী -২ আসনে প্রথম, দ্বিতীয়, অষ্টম , নবম, দশম, একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন। জাতীয় পার্টি প্রার্থীরা বিজয়ী হন তৃতীয়, চতুর্থ, ও সপ্তম সংসদে। পঞ্চম সংসদে বিজয়ী হন সিপিবি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১ টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে শুধুমাত্র ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১১ দিন মেয়াদী ৬ষ্ট সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হন। এই আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। তবে জামায়াত ইসলামীর প্রচুর ভোট রয়েছে। তাদের ভোট গুলো বিএনপি’র বাক্সেই যাবে।
নীলফামারী -২ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ়। এছাড়া নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর এর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণে আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে।
বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ