বিএনএ ডেস্ক : গোয়েন্দা সংস্থা গুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঠিক তথ্য দেয়নি। ইচ্ছাকৃত হোক বা অন্যভাবেই হোক, গোয়েন্দাদের বিশাল ব্যর্থতা ছিল। গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেন, আওয়ামী লীগ আমলের দাপুটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
৭ই আগস্ট দেশ ছেড়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে, তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। গোয়েন্দাদের রিপোর্টের সারসংক্ষেপটাই শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে।
আসাদুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি বলবো সেখানে যৌথ অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে। ইসলামী উগ্রবাদ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান। তিনি বলেন, ৪ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। পুলিশের প্রধানও ছিলেন সেখানে। সেনাপ্রধানও সেখানে ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, কিছুই হবে না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন আপনার সুরক্ষার দায়িত্ব আমার জিম্মায়। এসব কিছুর সাক্ষী আমি নিজে।
তখন আমি সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞেস করেছি- আপনি কি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন? তিনি জবাবে হ্যাঁ বলেছিলেন। এরপর আমি আমার অধীনে থাকা পুলিশ প্রধানকে সেনাপ্রধানের সঙ্গে স্বাধীনভাবে আলোচনা করার কথা বলেছি। তারা যেন সব স্বাভাবিক করে। কিন্তু আপনি দেখেছেন ৫ই আগস্ট কী হয়েছে।
এখন সবকিছু ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টে গেছে। গত বছরের ৩রা আগস্ট থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন সেই গণভবন থেকে ভিভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বপালনকারী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী(এসএসএফ) এর অস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হয়।
নিজের পরিবার এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার অতি আস্থাশীল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার একমাত্র ছেলে বর্তমানে জেলে…আমার অনেক আত্মীয়স্বজনও ভালো অবস্থায় নেই। আমার ছেলে কাশিমপুরের একটি কারাগারে রয়েছে।যেখানে আমরা একসময় সন্ত্রাসীদের আটক রাখতাম। কয়েকদিন পরপরই ছেলের কাছে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কেউ না কেউ আমার অবস্থান জানতে চায়। এ ছাড়া আমার ওপর একের পর এক মামলা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে প্রায় ২৯০টি খুনের মামলা হয়েছে। এটি নিশ্চয়ই একটি রেকর্ড, হয়তো আন্তর্জাতিক রেকর্ডও। ৫৪টি মামলায় যাকে খুন করার কথা বলা হয়েছে তারা জীবিত ফিরে এসেছেন…সেই মামলাগুলোতে, আমার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণে। গণমাধ্যম কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে মন্তব্য করতে পারছে না। তারা সবকিছুর জন্য আওয়াজ তুলতে পারে না। তারা এখন নীরব। আমি বিশ্বাস করি যদি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে এগিয়ে আসতে বলেন, তাহলে অবশ্যই সেটা ঘটবে।
বাংলাদেশে ফিরে আসার বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন আমি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছি না। তবে তা কেবল তখনই সম্ভব যখন আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা হবে, বিচারকরা অবাধে এবং নির্ভয়ে মামলার শুনানি করতে পারবে এবং আমাদের আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে উপস্থিত হতে পারবে। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়বো যদি আমরা সবাই সেখানে যেতে পারি…।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে দেখা না হলেও টেলিফোনে যোগাযোগ হয় উল্লেখ করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিন দিন আগে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার নির্দেশনা হচ্ছে- সকল নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়।
ভারতের সহযোগীতা প্রসঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলনে. আমি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য কী করেছে। আমি স্বীকার করি যে, ভারত সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য সেখানে ছিল। এখন ভারত কূটনৈতিকভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারছেন না। নতুন করে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমত, আদালত যাতে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারে, সেজন্য কূটনৈতিক চাপ এবং এর পক্ষে আওয়াজ উত্থাপন করা উচিত। আমি মনে করি ভারত এভাবে সাহায্য করতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, তার চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই, তিনি কোনো নেতা নন, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিও নন। দেশে খুব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ এক অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. ইউনূসের উচিত তার পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে লড়তে দেওয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার সুযোগ করে দেওয়া। কেননা, এটাই একমাত্র উপায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রকাশিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের এই স্বাক্ষাৎকারে অসত্য তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক এক বার্তায় জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একদিনে একাধিক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচার করেছে। গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের মনগড়া বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তাদের দাবি করা তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কারো কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী