বিএনএ,চট্টগ্রাম: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির আমীর মুহাম্মদ জুনায়েদ প্রকাশ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক সভা শেষে রোববার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় তাকে খুব চিন্তিত ও বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্প্রতি তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে কতিপয় উৎশৃংখল ব্যক্তি।। এরপর এ সংগঠনটি নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা ও সমালোচনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিডিও দেখে দেখে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগকারী প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার চলাকালে হেফাজত আমীরের কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা আসলো। তার ঘোষণায় হেফাজতের সবরকম কার্যক্রম বন্ধ রাখার ইংগিত মেলে।
ভিডিও বার্তায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতার পরামর্শে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে হেফাজতের কার্যক্রম শুরু হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা গ্রেফতার রয়েছেন।
এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।
১৬১দিনের মাথায় বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
গত বছরের ১৫ নভেম্বর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর এবং নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ঘোষণা করা হয়েছিল ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতে ইসলামের এ কমিটি।১৬১দিনের মাথায় বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হল।
আল্লাম আহমদ শফি হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতাকালীন আমীর হলেও এই কমিটিতে তার সব অনুসারীকেই বাদ দিয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
এমনকি আল্লামা আহমদ শফি মারা যাওয়ার মাত্র দুমাসের মধ্যেই তড়িঘড়ি করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।কমিটি গঠনের কয়েকমাসের মধ্যেই মারা যান মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী। এরপর সংগঠনটির পুরো নেতৃত্ব নিয়ে নেয় যুগ্ম মহাসচিব এবং খেলাফত মজলিস নেতা মামুনুল হক।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা
বিগত ২০১০ সালে নারী নীতির বিরোধীতা করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আত্মপ্রকাশ করে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। একইসালে ১৩দফা দাবিতে রাজধানীর মতিঝিলে ৫মে সমাবেশ করে অরাজকতা সৃষ্টি করে সংগঠনটির কর্মীরা। প্রশাসন ও আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের সাথে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
আল্লামা আহমদ শফির মৃত্যু
এরপর দীর্ঘদিন হেফাজত আপোষে চলো নীতি অবলম্বন করে। ২০২০সালে আল্লামা আহমদ শফির ছোটপুত্রকে হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান নিয়ে বাবুনগরী গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকদিন সফিপুত্র ও বাবুনগরী গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান করে। পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ করতে থাকে। অনেকটা সাংগঠনিক বিরোধের জের ধরে ২০২০সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার সব পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয় হেফাজত আমীর প্রবীণ আলেম আল্লামা আহমদ শফি ও তার পুত্র কে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয়।কিন্ত ১৮ সেপ্টেম্বর শতবর্ষী আল্লামা আহমদ শফি দুনিয়ার সব মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। আর এরপরই মূলত হেফাজতের নেতৃত্ব চলে যায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মাওলানা মামুনুল হকের হাতে।
হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকায় পুলিশের অবস্থান
এদিকে রোববার রাত নয়টার পর থেকে হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার আশেপাশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছেন।
বিএনএনিউজ/মনির