বিএনএ ডেস্ক: কে হচ্ছেন বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি- এই আলোচনা এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের গণ্ডি ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের মুখেও। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এ দলের মনোনীত ব্যক্তিই যে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত। দুই মেয়াদে ১০ বছরের দায়িত্ব পালন শেষ হবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের। সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুসারে, দুই মেয়াদের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না রাষ্ট্রপতি পদে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্রপতি পদে অনেককে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এখন আলোচনার তালিকা থেকে অনেকের নাম বাদ পড়েছে। নতুন কারও কারও নাম যুক্ত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ থেকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তা নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে ২৩ এপ্রিল। এর ৯০ থেকে ৬০ দিন আগে হলে ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, চলিত সংসদের মেয়াদেই অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথমেই আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রপতি পদে একজনকে মনোনয়ন দিতে হবে। তাই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বরাবরই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা ঘোষণার পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপতি পদে আসেন বর্ষীয়ান নেতা জিল্লুর রহমান। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি মারা গেলে ওই বছর এপ্রিলের ২৪ তারিখে প্রথম মেয়াদে ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. আবদুল হামিদ।
সাধারণত নিজেদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন দল। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কথায় এ পদের জন্য উঠে এসেছে বেশ কিছু নাম। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম বেশ জোরেশোরে আলোচনায় আসছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মসিউর রহমান কয়েক মাস থেকে আড়ালে থাকছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যাচ্ছে কম। তারা মনে করছেন শেষ মুহূর্তে মসিউর রহমান যেন বিতর্কিত না হন, এ কারণে তাকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এ থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে তার নাম।
মসিউর রহমান টানা তিন দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সব চাপ সহ্য করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জন্য সম্মুখভাগের যোদ্ধা ছিলেন তিনি। একাধিক আলোচনায় পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রে তাকে বিভিন্ন সময়ে প্রদান করা প্রলোভনের বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি।
এরপরই যে নামটি শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি করতে চান- এমন আলোচনা থেকেই শিরীন শারমিনের নাম আসছে।
এর বাইরে মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের নামও আলোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ভাষ্যমতে, শেখ হাসিনা তার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই চমকে দেন সবাইকে। সেই চমক হিসেবেই উঠে এসেছে একজন টেকনোক্রেট মন্ত্রীর নাম। নিয়মিত সংসদে উপস্থিত হন তিনি। সেই সঙ্গে প্রায়ই কবিতাও পড়ে শোনান সংসদ সদস্যদের। নিজ মন্ত্রণালয়ে টানা তিন মেয়াদে দায়িত্বে থাকলেও তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হয়নি। নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিয়েও সবাইকে চমকে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে নিয়ে আলোচনা জোরেশোরে শুরু হলেও এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে। ওবায়দুল কাদের নিজেই বলেছেন তিনি রাষ্ট্রপতি পদে যোগ্য নন। তা ছাড়া তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ায় তাকে নিয়ে আলোচনা কিছুটা কমে আসে।
মন্ত্রিপরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর জেলার সভাপতি পদে পুনর্বহাল হওয়ায় রাষ্ট্রপতি পদে তাকে নিয়ে এখন আর আলোচনা হচ্ছে না। যদিও তার নাম আলোচনায় আসায় পেছনে কাজ করেছে পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং আবদুল হামিদ। এই দুই নেতার মতোই তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক আ ক ম মোজাম্মেল হক।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর নামও আছে আলোচনায়। প্রবীণ এই নেতা আস্থার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন কি না, সেটি দেখার অপেক্ষা।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ