বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার তদন্তে আইনজীবী সমিতির গঠন করা কমিটির চার সদস্যের পদত্যাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কমিটির আহ্বায়কও দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। আইনজীবীরা বলছেন, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তারা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে যুগ্ম জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচারককে প্রধান করে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। তবে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
ছড়িয়ে পড়া তথ্যে সরকারের চাপে পদত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। আইনজীবী সমিতির নেতারা বিষয়টিকে স্রেফ গুজব বলে অবহিত করেছেন। তারা বলছেন, তদন্ত কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ দেওয়া হয়নি।
গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময়কাণ্ডের পর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিএনপিপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত আবদুস ছাত্তারকে। সদস্য সচিব করা হয় সমিতির বর্তমান কমিটির কর্মকর্তা কাশেম কামালকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-আইনজীবী জাফর ইকবাল, মো. মাঈনুদ্দিন সোহেল ও মো. ইবনু। ইতিমধ্যে সদস্য সচিবসহ চারজন পদত্যাগ করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারের বা অন্য কারও চাপে সমিতির তদন্ত কমিটির সদস্যরা পদত্যাগ করেননি। এ ধরনের কোনো তথ্য আমরা শুনিনি। তা ছাড়া এটি তো সরকারের তদন্ত কমিটি নয়। আইনজীবী সমিতির তদন্ত কমিটি। তাই তারা পদত্যাগ করতেই পারেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সাবেক জেলা পিপি আবদুস সাত্তার বলেন, কমিটির সদস্যরা পদত্যাগ করেছে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে। আমরা যদি তদন্ত করি তবে পুলিশের তদন্ত ব্যাহত হবে। বিভ্রান্তি দেখা দেবে তদন্ত নিয়ে। মূলত বিভ্রান্তি এড়াতে জেলা আইনজীবী সমিতির তিন সদস্য সমিতির সেক্রেটারি বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। আমি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পালন থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। এখনও পদত্যাগ করিনি।
তিনি বলেন, গত ২৬ নভেম্বরের ঘটনার পর গত ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ১০ ডিসেম্বর কমিটি গঠন সংক্রান্ত চিঠি পাই। কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে। তবে ইতিমধ্যে অনেক দিন পার হয়ে গেছে। এ ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী তদন্তও চলছে। এ সময় আমাদের তদন্ত অব্যাহত রাখা সাংঘর্ষিক হবে বলে মনে করছি।
পদত্যাগ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, সমিতির তদন্ত কমিটি নিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর চিঠি পাওয়ার পর সদস্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এক দিন পর ১১ ডিসেম্বর তিন সদস্য পদত্যাগ করেন। এরপর সদস্য সচিবও পদত্যাগ করেন। আমিও আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির তদন্ত কমিটির সদস্যদের পদত্যাগে প্রশাসন কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করেছে কি না জানতে সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে একাধিকবার ফোন করা হয়। তিনি রিসিভ করেননি।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার চিন্ময় দাশকে গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয় জামিন শুনানি করতে। আদালত ওই দিন জামিন আবেদন নাকচ করলে ইসকন সদস্যরা পুরো আদালত প্রাঙ্গণে অরাজকতা শুরু করেন। বিপুলসংখ্যক ইসকন সদস্য পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আদালত এলাকার কাছে কোতোয়ালি থানার পেছনে রঙ্গম হলের সামনের সড়কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফের পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়। মোট ছয়টি মামলা করা হয় আলিফ হত্যাকাণ্ড নিয়ে। পুলিশ ইতিমধ্যে মামলার অনেক আসামিকে গ্রেফতার করেছে। একাধিক আসামি আদালতে হত্যায় জড়িত থাকা নিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আগামী ২ জানুয়ারি চিন্ময়ের জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ