27 C
আবহাওয়া
৪:৪৩ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বলপ্রয়োগে পদত্যাগ: মৃত্যুকেই আলিঙ্গন উপাধ্যক্ষ আয়ুব!

বলপ্রয়োগে পদত্যাগ: মৃত্যুকেই আলিঙ্গন উপাধ্যক্ষ আয়ুব!

বলপ্রয়োগে পদত্যাগ: মৃত্যুকেই আলিঙ্গন উপাধ্যক্ষ আয়ুব!

বিএনএ, ঢাকা: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ১৮০ ডিগ্রীতে ঘুরে যায়। আত্মগোপনে চলে যায়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই অবস্থায় হাট-ঘাট মাঠ দখল করে নেয় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির দখল করে নেয় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন। এর মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ।

যদিও এই ঘটনায় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। একটি মহল উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে অভিযোগ করেন ইসলামী ছাত্র শিবির।

YouTube player

কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এ কলেজে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল একটি পক্ষ। কখনো বৈষম্যবিরোধী, কখনো এলাকার বাসিন্দা হিসেবে দাপট দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে তারা দাবি-দাওয়ার নামে প্রতিষ্ঠান অচল করার চেষ্টা চালায়। বেতন কমানো ও কিছু শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিল তারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের মাসিক বেতন কমানো হয়। কিন্তু এরপরও ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে অরাজকতা শুরু করে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

চারদিক থেকে ঘিরে ধরে, জোর করে উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুবকে পদত্যাগপত্রে সই করতে বাধ্য করা হয়। এ সময় পেছন থেকে একজন তাকে ছুরি দিয়ে ভয় দেখান। একপর্যায়ে উপাধ্যক্ষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের হাতে তিন শিক্ষকের নাম-সংবলিত একটি বরখাস্তের আদেশের কপি ধরিয়ে দিয়ে সেটিতেও সই নেওয়া হয়। যে তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে বাধ্য করা হয়েছে তারা হলেন- মো. দবির উদ্দিন, মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ও একেএম ইসমাইল।

২৬ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনার বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠান চয়ন দাশ। তার পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল্লাহ নূরী, হাজেরা-তজু কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ চয়ন দাশকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তিনি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কার্যালয়ে আগে থেকেই হাজেরা-তজু কলেজের কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে দেখতে পান। সেখানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি এবং জামায়াতের একজন নেতাকে সদস্য করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর পাঠানোর জন্য জোরপূর্বক তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এই স্বাক্ষরে তার কোনো মতামত ছিল না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

উপাধ্যক্ষ এস এম আয়ুব ২৪ সেপ্টেম্বরের বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। শারিরীকভাবে অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় ৮/১০ দিন আগে উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুব সদ্য গঠিত গভার্নিং বডির সভাপতির বরাবর নিজেই একটি পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছিলেন। এই অবস্থায় গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে তার অবস্থার চরম অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল, এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়। দুপুর ১২ টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে পরিবার, সহকর্মী ও স্বজনদের দাবি, ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরেই তিনি মারা যান।

এই মেধাবি শিক্ষকের মৃত্যুর খবর শুনে হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক ও স্বজন হাসপাতালে ছুটে যান। শনিবার আসরের নামাজের পর চান্দগাঁওয়ের মৌলভি পুকুর পাড় জামে মসজিদের সামনে অধ্যাপক আয়ুবের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

রোববার দুপুরে জোহরের নামাজের পর বাঁশখালীর কাথারিয়ায় তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ মাইকপাড়া মাস্টার আবু আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর প্রিয় শিক্ষক, উপাধ্যক্ষ এসএম আয়ুবকে সমাধিস্থ করা হয়। সেই সঙ্গে নিভে গেছে হাজেরা তজু কলেজের ৩৪ বছরের এই জ্ঞানের প্রদীপ!

বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ