বিএনএ ক্রীড়া ডেস্ক: টেস্ট ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দীর্ঘ ফরমেট থেকে অবসর নিলেও বাকি দুই ফরমেটে খেলা চালিয়ে যাবেন এই টাইগার অলরাউন্ডার।
গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্ট চলাকালে হঠাৎ করে মাহমুদউল্লাহ সতীর্থদের জানিয়ে দেন যে, তিনি আর টেস্ট খেলবেন না। বুধবার (২৪ নভেম্বর) সেটিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন তিনি।
এক বিবৃতিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেন, একটা ফরমেটকে বিদায় বলা সহজ নয়। তবে, টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করার এটাই সঠিক সময়। টেস্ট থেকে বিদায় নিলেও ওয়ানডে এবং টি-২০ খেলে যেতে চান এই অলরাউন্ডার। বিবৃতিতে বিসিবি সভাপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং সতীর্থ ও সাপোর্ট স্টাফদের ধন্যবাদ জানান মাহমুদউল্লাহ।
গত জুন-জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন তিনি। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা ম্যাচের শেষ দিন তাকে গার্ড অব অনারও দেয়। কিন্তু দলের মধ্যে সবাই জানলেও এতোদিন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি তিনি। মিডিয়াতেও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলাকালে মাহমুদউল্লাহকে টেস্ট সিরিজে খেলার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, আর কখনও টেস্টে ফিরবেন না।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের হয়ে তার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু হয়। দুই বছর পর ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট ক্যাপ পান। অভিষেক টেস্টে ব্যাটিংয়ে ভালো না করলেও বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৩টি, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টি উইকেট সংগ্রহ করেন তিনি। এখনও তা অভিষেকে দেশের বাইরে বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। পরের টেস্টেও নেন ৪ উইকেট।
তখন পুরোপুরি অলরাউন্ডার তিনি। ব্যাট করছিলেন ৮ নম্বরে, সঙ্গে বোলিং। ব্যাটিংয়ের সাফল্যের জন্য তাকে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ফিফটির দেখা পান। পরের টেস্টে ৯৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। ওই সিরিজে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং দেখেই তাকে বিশ্বের সেরা ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান বলেন ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার।
পরের সিরিজেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ পান হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতে ওই বছরই ব্যাটিং অর্ডারে তার প্রমোশন হয়। পাঁচে উঠেও শুরুটা খারাপ করেন নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে দুইটি ফিফটি করেছেন তিনি।
এরপর থেকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন নি। মাঝেমধ্যে দুই-একটি ফিফটি, বারবার থিতু হয়ে আউট হওয়া, এই ছিল নিয়মিত চিত্র। তার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের সময়টায় ২৩ ইনিংসে তার ফিফটি ছিল কেবল ৩টি। তবুও একটু ব্যাটিং, একটু বোলিং এবং সীমিত ওভারে ভালো পারফরম্যান্স মিলিয়ে দলে টিকে যান।
এরপর দুইবার বাদ পড়ার দুয়ারে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই শেষ সময়ে ভালো করে টিকে যান। ৮ বছরের সেঞ্চুরি খরা কাটিয়ে অবশেষে দ্বিতীয় টেস্ট ২০১৮ সালের নভেম্বরে সেঞ্চুরির দেখা পান। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা সময়ও তখন থেকেই। চার টেস্টের মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি করেন লাল-সবুজের জার্সিধারী এই সাইলেন্ট কিলার।
২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি ও পরের টেস্টে ওয়েলিংটনে করেন ফিফটি। এরপরই আবার ব্যর্থতার ধারা, গত বছর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাজে শট খেলে বাদ পড়া, এবার জিম্বাবুয়েতে ফেরা, রাঙানো এবং বিদায়।
এক যুগের ক্যারিয়ারে ৫০ টেস্টে প্রায় ৩৪ গড়ে ২ হাজার ৯১৪ রান করেছেন তিনি। ৫ সেঞ্চুরি ও ১৬টি ফিফটিও আছে তার। ৬৬ ইনিংসে বোলিং করে ৪৩ উইকেট শিকার করেন মাহমুদউল্লাহ।
বিএনএনিউজ/আরকেসি