বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এর প্রভাবে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা দেশের অধিকাংশ জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসও হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া উপকূলে ৫ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেটি ও বহির্নোঙরে পণ্য খালাস(সব ধরনের অপারেশন) বন্ধ রাখা হয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, জেটিতে এখন জাহাজ আছে পাঁচটি। এ ছাড়া বহির্নোঙরে ৬০টির মধ্যে ২৯টিতে পণ্য খালাস চলছিল। তবে এরই মধ্যে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাট এলাকায় অবস্থানরহ সব লাইটার জাহাজকে সদরঘাট ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি আসায় এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নিজস্ব সংকেত ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এই সতর্কতার পদক্ষেপ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সিত্রাং’র কারণে সাগর উত্তাল থাকায় বহিনোঙরেও পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।
সংশি¬ষ্ট সূএে জানা গেছে, লাইটার জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর আশপাশে আনা হয়েছে। অপরদিকে বড় জাহাজগুলোকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দরের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, আবহাওয়া অফিস থেকে ৬ নম্বর সংকেত জারির পর অ্যালার্ট-৩ জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরই জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। জেটি থেকে পালাক্রমে জাহাজ সাগরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেটিতে থাকা জাহাজে ব্যাপক আঘাত লাগে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে জাহাজ জেটি থেকে কিছুটা দূরে সাগরে পাঠানো হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় “সিত্রাং” আরও ঘণীভূত ও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামিকাল মঙ্গলবার ভোররাত অথবা সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ (সাত) নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সুমুদ্রবন্দরকে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি রোববার রাতেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নিয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) তা আরও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
উপকূলে জলোচ্ছাস
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুুতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ
সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
মোবারক হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া সমুদ্রে যে সব জাহাজ যেখানে অবস্থান করছে, সেখান থেকে না সরতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
বিএনএনিউজ২৪,জিএন