বিএনএ ডেস্ক, ঢাকা: পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কে নির্মিত পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর খুলে দেওয়া হলো বহুল প্রতীক্ষিত পায়রা সেতু। সেই সঙ্গে অবসান ঘটলো বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের ৫টি ফেরি পারাপার। এতে ভোগান্তি কমেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। এখন দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি, গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। ঘুঁচবে বেকারত্ব।
রোববার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, পায়রা সেতুর দৈর্ঘ্য ১৪৭০ মিটার বা ৪ হাজার ৮২০ ফুট এবং প্রস্থ ১৯.৭৬ মিটার। এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল পদ্ধতিতে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় সেতু পায়রা। তবে দেশে প্রথমবারের মতো ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম (সেতুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ) চালু করা হয়েছে। যা বজ্রপাত, ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অতিরিক্ত মালামালবোঝাই যানবাহন উঠলে সেতুটি ভাইব্রেশন তৈরি করে ক্ষতির শঙ্কা থাকলে সংকেত দেবে।
কর্ণফুলি সেতুর মতোই পায়রায় লং স্প্যান অর্থাৎ ২০০ মিটার স্প্যান ব্যবহৃত হয়েছে। যা পদ্মা সেতুর স্প্যানের চেয়েও বড়। নদীর মাঝখানে একটিমাত্র পিলার ব্যবহার করা হয়। ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের পাইল ১৩০ মিটার গভীর, যা দেশের সর্বোচ্চ গভীরতম পাইল। সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু। উভয়পারে ৭ কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। পিলারের পাশে স্থাপন করা হয় নিরাপত্তা পিলার। সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা।
প্রকল্প অনুমোদন থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত ৯ বছরের মতো সময় লেগেছে সেতু চালু হতে। সেতুতে ৩২ টি স্প্যান, ৫৫টি টেস্ট পাইল, ১৬৭টি বক্স গার্ডার, ২৮৬টি পাইল, ৩১টি পাইলক্যাপ, ২২৪টি আই গার্ডার স্থাপন করা হয়েছে। মূলত ২০১২ সালের ৮ মে মাসে একনেকে অনুমোদন পায় পায়রা সেতু প্রকল্প।
বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে কুয়েত ফান্ড থেকে ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকার জোগাবে ৭৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোরলেনবিশিষ্ট পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় ২০১৫ সালের ৩১ মে ব্যয় প্রাক্কলন বাড়িয়ে ৪১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়।
২০১৭ সালের ২০ জুন সংশোধিত ব্যয় প্রাক্কলন করে হয় ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা উন্নীত করা হয়। যাতে ব্যয় বেড়ে যায় ৮৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করে করা হয় ১৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সময় বাড়ানো হয় ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় সেতুর ভৌত কাজ। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লনজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন’ সেতুটি নির্মাণ করে।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ