বিএনএ, নোবিপ্রবি : অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের বিকাশগত সমস্যা যা একটা শিশুর তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজ হয়ে ওঠে বৈরি। অনাদর-অবহেলায় বড় হয়ে ওঠে তারা; পরিণত হয় সমাজের বোঝা হিসেবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) নোবিপ্রবির শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে অটিজম শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নোয়াখালী অটিজম ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পরিদর্শন ও তাদের মাঝে উপহার বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে । এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা বেগম পপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল হোসেন ও স্পেশাল এডুকেটর রুভেন আক্তার মনি।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অটিস্টিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ১৭ লাখেরও বেশি অটিস্টিক শিশু আছে। উল্লেখ্য, সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশেও এর হার দিন দিন বেড়েই চলছে। অথচ অটিজম চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও আমরা অনেক পিছিয়ে। অটিজম মূলত মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গবেষকরা অটিজমকে ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অটিজম কেন হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা থেকে এ সমস্যা হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রতীয়মান হয়। বিগত পাঁচ-ছয় বছরে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা অটিজম শিশুদের সার্বিক অগ্রগতির এক মাইলফলক।
নোয়াখালী অটিজম ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বর্তমানে ২৭ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু এবং তাদের শিখনের জন্য সর্বমোট ৩০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ও স্টাফ রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে দিনব্যাপী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করেন। পরিদর্শনের শেষ পর্যায়ে শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে নোয়াখালী অটিজম ওয়েলফেয়ার সোসাইটির শিক্ষকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্পেশাল এডুকেশন এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপহার তুলে দেওয়া হয়। উপহার তুলে দেন শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা বেগম পপি। তিনি এসময় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
স্পেশাল এডুকেটর রুভেন আক্তার মনি বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত ৩ জন মেইনস্ট্রিমে সুযোগ পেয়েছে, আরো কয়েকজন শিশু মেইনস্ট্রিম এ যাওয়ার প্রসেসে রয়েছে। আমাদের এখানে শিক্ষক- শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ২ জন শিক্ষক দায়িত্বরত রয়েছেন। শিক্ষকরা সবাই পূর্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁরা জানেন একটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর বিকাশের জন্য কি করা উচিত। এখানে শিক্ষকরা খুবই আন্তরিকতার সাথে শিশুদের শিখনে কাজ করেন। আমাদের ভিশন হচ্ছে, অটিজম বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং অটিজম আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা ও অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ তাদের সকল নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী আলজকি হোসেন বলেন, ‘অটিজম নিয়ে আমাদের সমাজে সচেতনতার অভাব ও যথাযথ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তাই পেশাগত দক্ষতা এবং তত্ত্বীয় জ্ঞানের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের বিশেষতঃ যারা এই ধরনের ফিল্ড নিয়ে কাজ করেন তাদের জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরি।’
শিক্ষা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আiব্দুল্লাহ আল ফারাভী বলেন, ‘প্রথমবার স্বল্প সময়ের এ পরিদর্শন শেষে শিশুদের প্রতি মায়া বসে গেছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সমস্যাগুলো অস্বাভাবিক কিছু নয় বরং সাধারণ।’
বিএনএনিউজ/শাফি/এইচ.এম।