বিএনএ, কুবি : সারাদেশে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-২২ সেশনের ব্যবসায় অনুষদ ভিত্তিক ‘সি’ ইউনিটে প্রথম স্থান অর্জন করেন ঈশিকা জান্নাত। তার কৌতূহলী মন। স্বভাব শান্ত হলেও তার মধ্যে জানার ও শিখার আগ্রহটাই ছিলো সবসময় অন্যান্যদের থেকে ভিন্ন। তার অদম্য সাহস আর মেধা দিয়ে কেড়ে নিয়েছেন সবার মন। যদিও সে শিক্ষা জীবনে কখনো ক্লাসে ১ম তিন জনের মধ্যে থাকতে পারতেন না। তিনি সবসময় ক্লাসের অবস্থান নিয়ে হতাশই থাকতেন।
প্রথম হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে ঈশিকা জান্নাত বলেন , কুমিল্লায় বড় হয়েছি । তবে পছন্দের শীর্ষে ছিল সবসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মায়ের দোয়াই ছিলো সাফল্যের একমাত্র মূলমন্ত্র। প্রথমে রেজাল্ট পেয়ে বিশ্বাস হচ্ছিলো না । ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কোচিং নিয়মিত যে পরীক্ষা দিতাম ঠিক সে রকমই মনে হয়েছিল পরীক্ষা।
কিন্তু কখনো ভাবিনি এতো ভালো করবো পরীক্ষায়। চেষ্টা করেছি নিয়মিত পড়াশোনা করতে ।
ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিদিন কোচিংএ যাওয়া, নামাজ পড়া, ঘুমানো আর খাওয়াদাওয়া ছাড়া বাকি সময় পড়াশোনাতে কাটিয়েছি। অনেক সময় হতাশ হয়ে যেতাম । ভাবতাম চান্স হবে না । তখন বড় আপু অনুপ্রেরণা দিতো ।
বাবা আবদুল হাকিম মোল্লা দেশের বাহিরে ছিলেন দীর্ঘদিন। স্কুল জীবন থেকেই পড়াশোনার অনুপ্রেরণা পেয়েছে বড় বোনের কাছ থেকে। বড় বোনের শাসন, আদর যত্নে আজকে এতদূর আসা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লড়াই করেও টিকতে না পেরে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ সি ‘ ইউনিটে অর্জন করেছেন প্রথম স্থান। দেখিয়ে দিয়েছেন নিজের অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর।
ঈশিকার সব কিছুর পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে ছিলো তার বড় বোন জান্নাতুল মুনিয়া। মা হাসিনা বেগমের অনুপ্রেরণাও কিছুতেই কমতি ছিলনা তার এ সাফল্যের পিছনে। তার মা গৃহিণী। মা এবং বড় বোন সবসময়ই উৎসাহ দিতেন তাকে। তাদের বিশ্বাস ছিল ঈশিকা কিছু করতে পারবে।
ঈশিকা যে প্রথম হবে সেটা তার বড় আপুর কল্পনার বাহিরে ছিল। তিনি তার সাফল্যে উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি তেমন মনোযোগী ছিল না। তবে স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই ধারাবাহিকতায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।
ঈশিকার বড় বোন পড়তেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্যবস্থাপনা বিভাগে’। বর্তমানে তিনি কুমিল্লার কোর্টবাড়ি সোনালী ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন।
ঈশিকা পরিবারের দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। কুমিল্লার মোহাম্মদপুর গ্রামে বেড়ে উঠেন তিনি। কুমিল্লার কোর্টবাড়ি বর্ডারগার্ড পাবলিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হয়েছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে।
মেধাবী এই তরুণী মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৬ এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেই জিপিএ ৪.৯২ পেয়েছেন । গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সে ৮৬ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়েছেন।
ঈশিকা ভর্তি পরীক্ষার সময় ডিঅ্যাক্টিভ রেখে ছিলেন তার ফেইসবুক। তবে মাঝে মাঝে একটু এক্টিভ করলেও কিছুক্ষণ চালিয়ে আবার ডিএক্টিভ করে দিতেন।
নবীনদের পরামর্শ দিয়ে ঈশিকা বলেন, যারা ভালো ফলাফল করতে চায় তাদের অবশ্যই প্রথমত সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখতে হবে। সেই সাথে নিয়ম করে পড়াশোনা করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন বই না পড়ে যেকোনো একটি সিরিজের বই ভালো মতো পড়তে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফেসবুক থেকে দূরে থাকা। যেন সময়টা ভালো মতো কাজে লাগানো যায়।
বিএনএনিউজ/ হাবিবুর রহমান/ এইচ.এম।