বিএনএ ঢাকা: একশ পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন বাতিল করার জন্য জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গত দুই বছরে ৪৫০টি পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন দেয়া হয়েছে-জানিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ পত্রিকাগুলোর এক কপিও বের করতে পারেনি ।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘সাংবাদিকতায় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
সে সময় তিনি আরও বলেন, যেসব পত্রিকা গত দুই বছরে একটি কপিও বের করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন সাংবাদিকদের নিয়োগ দেয়, একটা কার্ড দেয় কিন্তু তাদের কোনো বেতন দেয় না। এগুলো হচ্ছে ‘ভুতুড়ে পত্রিকা’। বেতন না পেয়ে তারা চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়, আর সেই বদনাম সাংবাদিক সমাজের ওপর পড়ে। এ জন্য এসব ভুতুড়ে পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করা হলো। ইতোমধ্যে একশটি পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন বাতিল করার জন্য বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে নাম পাঠানো হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেসব পত্রিকা ডিক্লেয়ারেশন নিয়ে সেই অনুযায়ী পত্রিকা বের করে না, সেগুলোর ডিক্লেয়ারেশন রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই বলে জানান মন্ত্রী।
অনলাইন গণমাধ্যমকে আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা হিসেবে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, যথেচ্ছভাবে নয়, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তবেই অনলাইন গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। যেসব অনলাইন পোর্টাল সংবাদ ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়, এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আইপি টিভির জন্য ছয়শ’ আবেদন পড়েছে। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একজন বিচারপতিও মন্তব্য করেছেন, যা রায়ের অংশ। এক্ষেত্রটিও সর্তকতার সঙ্গে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় পাস করা নীতিমালা অনুযায়ী আইপি টিভি কোনো সংবাদ প্রচার করতে পারবে না। খুব সহসা আইপি টিভি’র রেজিস্ট্রেশন দেয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও সমাজের বহুমাত্রিক বিকাশের স্বার্থে গণমাধ্যমের প্রসার ও স্বাধীনতা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের নীতি-নৈতিকতাও আবশ্যক। তা না হলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রসারের সঙ্গে নীতি-নৈতিকতা থাকলেই কেবল গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য সফল হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমের বিকাশ ও সাংবাদিক সমাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কাজ করেছেন সেটি অন্য কোনো সরকার করেনি। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিকদের জন্য যে ব্যবস্থাগুলো ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে, আশেপাশের দেশে তা করা হয়নি। যারা বড় বড় কথা বলেন এবং দলাদলি করেন, তারা কিন্তু এই কাজগুলো করেননি।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৭টির মতো টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। খুব শিগগিরই আরও দুই একটি অনএয়ারে আসবে। এতগুলো প্রাইভেট চ্যানেলের কারণে অনেকগুলো কর্মসংস্থান হয়েছে।
ড. হাছান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন সাংবাদিকবান্ধব নেতা ছিলেন। তখন যারা সাংবাদিক ছিলেন তারা বঙ্গবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। সেই কারণে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও বাঙালির জন্য তার চিন্তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সহজ হয়েছিল। স্বাধীন হওয়ার পর দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। বাসন্তী নামের একজন নারীকে শাড়ির চেয়ে বেশি দামের জাল পরিয়ে ছবি ছাপানোসহ কিছু পত্রপত্রিকায় ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে আসার পর সেই বাসন্তীর সঙ্গে দেখে করেছেন, তার ঘরও পাকা করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর পত্রপত্রিকার সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। যেখানে ছিলেন মিজানুর রহমান, অধ্যাপক খালেদ, আনিসুজ্জামান খান, গিয়াস কামাল চৌধুরী, আমানুল্লাহ খান, আব্দুল গণি হাজারী, তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সলিমুজ্জামান। এর বাইরেও সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের পরামর্শ নেয়া হয়েছিল। পত্রিকার সংখ্যা সীমিত করার আগে তাদের সবার পরামর্শ নেয়া হয়। কোনো সাংবাদিক সেদিন বেকার হননি, বেশিরভাগ চাকুরিচ্যুতদের অন্যত্র চাকুরি দেয়া হয়েছিল। বাকিরা তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভাতা নিয়ে আসতেন বলে জানান মন্ত্রী।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বর্তমান সভাপতি মুরসালিন নোমানী এবং সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএনিউজ/আরকেসি