চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের শত বছরের পুরাতন ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলী খেলা(কুস্তি প্রতিযোগিতা) আগামীকাল মঙ্গলবার(২৫ এপ্রিল ২০২৩) স্থানীয় লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে স্থানীয় লালদীঘি ও আশপাশের এক বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিরাট বৈশাখি মেলা বসেছে।
আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল বলী খেলার মেলা থাকবে।তবে ২৫ এপ্রিল হবে লালদীঘি ময়দানে বলী খেলা।
জব্বারের বলীখেলা এক ধরনের কুস্তি খেলা, যা চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে প্রতিবছরের ১২ই বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বলা হয় বলী। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তি প্রতিযোগিতা বলী খেলা
নামে পরিচিত। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার গোড়া পত্তন করেন।পরবর্তী তে তার মৃত্যুর পর এই প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। জব্বারের বলীখেলা একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যমন্ডিত প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দানের আশে পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। এটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী মেলা।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর এই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব ও প্রশিক্ষণে উৎসাহ দিতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বলী খেলা বা কুস্তি প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও মিয়ানমারের রাখাইন( আরাকান অঞ্চল) থেকেও নামী-দামি বলীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন।
২০২২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিলের জব্বারের বলী খেলার ১১৩ তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হন চকরিয়া উপজেলার তরিকুল ইসলাম জীবন।
লালদীঘির বৈশাখী মেলা
এদিকে আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলার ১১৪তম আসরে নগরীর লালদীঘি মাঠে বাঁশ ও বালি দিয়ে তৈরি হয়ে গেছে লড়াই মঞ্চ। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এই বলী খেলায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, তিন পার্বত্য জেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা বয়সী বলীরা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
লালদীঘি মাঠকে কেন্দ্র করে প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসেছে। ঈদের ছুটির মধ্যেই মেলা উপলক্ষে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ,নরসিংদী, খুলনা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন তাদের পণ্য নিয়ে।ঈদের ছুটি শেষে চট্টগ্রাম শহরে ফিরতে শুরু করা মানুষের অংশগ্রহণে জমজমাট হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গণ- এমনটাই আশা করছেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীরা।
মাটির তৈজসপত্র, ঝাড়ু, হাতপাখা, শীতলপাটি, দা-খুন্তি, প্লাস্টিকের সামগ্রী-ফুল, মণ্ডা-মিঠাই, গৃহসজ্জার সামগ্রী, গাছের চারা, তামা-কাঁসা-পিতলের সামগ্রী, কাঠের আসবাবপত্র, বেতের আসবাব, বাদ্যযন্ত্র, দোলনা, মাছ ধরার জাল, মোড়া, পিঁড়ি, জলচৌকি পাওয়া যায় মেলায়। শিশুদের খেলার জন্য থাকে দোলনাসহ নানা সামগ্রি।
বিএনএনিউজ,এসজিএন