23 C
আবহাওয়া
১১:৪৮ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মুকসুদপুর সাব-রেজিস্টার অফিসের দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট

মুকসুদপুর সাব-রেজিস্টার অফিসের দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট


বিএনএ,গোপালগঞ্জ:গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর সাব-রেজিস্টার অফিসের অনিয়ম দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। চাহিদা মত টাকা পেলে যে কোন দলিলই রেজেস্ট্রি করে দিতে পারেন সাব-রেজিস্টার। এমন কি নাবালকের সম্পত্তি  অবলীলায় রেজিস্ট্রি করে দেন তিনি (এমনই একটি দলিল যার নং ১৬৯৮ তারিখ ১০ মার্চ ২০২১)। তবে চাহিদা মত টাকা না পেলে কোন দলিল রেজেস্ট্রি হয় না। তিনি এমন সব কাগজপত্র চেয়ে বসেন যে, দাতা-গ্রহীতা কেউই জোগাড় করতে পারেন না।

জানা গেছে, মুকসুদপুর উপজেলার মুকসুদপুর নগর সুন্দরদী গ্রামের রফিকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সেই সুবাদে  পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে ফরিদপুরে বসবাস করতেন তিনি। রফিকুল এবং তার স্ত্রী জিন্নাত আরা আজাহারুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম নিলু এবং তাজুল ইসলামকে ওয়ারিশ রেখে ইন্তেকাল করেন। এর পরে আজাহার হঠাৎ জোবাইদা গুলশান আরা ও কাজল ইসলাম  নামে দুই স্ত্রী  এবং সাহেবুল ইসলাম, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফাতেমা-তুজ জোহরা, সাদিকা ইসলাম, সারা ইসলাম ও সাদিয়া ইসলাম রিয়া নামের সন্তান রেখে ইন্তেকাল করেন।

রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর জিন্নাত আরা বেগমের মালিকাধিক জমির সাব-কবলা দলিলে দাতা ১১ জন গ্রহীতা ৩ জন। জমির পরিমান সাড়ে ১৬ শতাংশ। মৌজা পৌরসভার পশ্চিম গোপিনাথপুরের প্রাইমারি স্কুলের পাশে এখনই বাড়ি করার উপযুক্ত এসএ খতিয়ান ৪৫৫ দাগ ৫৭৮, বিআরএস খতিয়ান ৬১১ দাগ ৩৬১। জমির বর্তমান মুল্য ৪৪ লাখ টাকা এবং দলিলে বিক্রয় মুল্য লেখা হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা।

নগদ টাকার প্রয়োজনে উক্ত মাতৃক এবং দাদীর ওয়ারিশ হিসেবে জমি বিক্রি প্রস্তাব করায় মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের বাসুদেবপুর গ্রামের আরফিন সরদারের ছেলে হাফিজুর সরদার ও একই গ্রামের তোতা সরদারের ছেলে মফিজুল সরদার এবং চাদপুর জেলার মতলব থানার পাদুয়া গ্রামের রুস্তম খায়ের মুন্সীর ছেলে কাউছার আলম জমি কেনার প্রস্তাব করেন।

পরে জমির দখল পজিশন, এসএ, আরএস এবং বিআরএস কাগজপত্র দেখে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে দর দাম করে ৪৪ লাখ টাকা ঠিক হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। মার্চ মাসের ১০ তারিখে দলিল করার আগে দলিল লেখক রিয়াজ মিয়া গিয়ে সাব-রেজিস্টার কামরুল হাসানের সঙ্গে দেন-দরবার করেন।

এর মধ্যে জমির মালিক জিন্নাত আরার মৃত ছেলে আজহারুল ইসলামের ৮ জন ওয়ারিশের মধ্যে ছেলে সাহেবুল ইসলামের বয়স ১৭-এর একটু বেশী, ছোট মেয়ে সাদিয়া ইসলাম রিয়া ১৪ বছরের একটু বেশী। অথার্ৎ জমির ১১ জন দাতার মধ্যে দু’জন এখনো সাবালক হননি।

কিন্তু, মুকসুদপুরের সাব-রেজিস্ট্রার জমির মুল্য কমিয়ে এবং দাতাদের জন্ম সনদ জাল জালিয়াতির আশ্রয় ও ২ লাখ টাকার বেশি ঘুষ নিয়ে জমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন। আর এই লেনদেনে সহযোগিতা করেন দলিল লেখক এবং তার সহকারি।

জমি কেনা-বেচার মিডিয়া হিসেবে কাজ ও জমির পার্শ্ববর্তী ওয়ারিশ আরিফুর রহমান রাজ বলেন, তিনি দাতা ও গ্রহীতার সঙ্গে সমন্বয় করে দিয়েছি। জমি দাতাদের জমিটি বিক্রির খুব প্রয়োজন ছিল, ক্রেতাদেরও জমির প্রয়োজন ছিল। এটা বেচা কেনা এবং দলিল পর্যন্ত অবহিত ছিলেন। বয়স কম-বেশী এটা তার জানার বাইরে বলে জানান আরিফুর রহমান।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দুদকের প্যানেল অ্যাডভোকেট ফায়েক উজ্জমামান জানান, জন্ম সনদে সাবালক না হলে সাব-রেজিস্টার কোন দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারেন না। এটা তার এখতিয়ারে নেই। জাল জালিয়াতি একটা বড় অপরাধ। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিৎ।

এ ব্যাপারে জমির দলিল লেখক রিয়াজ মিয়া জানান, পার্টি যে কাগজপত্র এবং এনআইডি বা জন্ম সনদ দেয় এবং জমির ২৫ বছরের ইতিহাসসহ আরএস, এসএ বিআরএস, পরচা, সংশ্লিষ্ট দলিল এবং খাজনা পরিশোধের কাগজপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে দলিলের প্রকৃতি এবং সরকারি দামের কম না রেখেই দলিল প্রস্তুত করে রেজিস্ট্রি করার জন্য অফিসে দেন। অফিসে কাগজপত্র যাচাই করে জমি রেজিস্ট্রি করেন। এখানে বয়স কম বা বেশী কি হয়েছে সেটি বিষয় নয়। পার্টি যে কাগজপত্র দাখিল করেছেন তা যদি ভুয়া বা ভিত্তিহীন হয় তাহলে পার্টি দায়ী। এ ব্যাপারে নিজেকে  নির্দোষ দাবি করে তিনি।

রেজিষ্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারি মাহফুজুর রহমান জানান, কম বয়সী কারোই জমির দলিল করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই দলিলে কারও গাফলতিতে জন্ম তারিখ কম-বেশি দেখানো হয়েছে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তার অনুসন্ধান করবে। তবে বয়স কম হলে ওই দাতার জমি দলিল করতে হলে আদালতের আদেশ পত্র বা সাকসেশন প্রয়োজন হবে।

অভিযুক্ত সাব-রেজিস্টার কামরুল হাসান জানান, জমির কাগজপত্র দাতা গ্রহিতাদের সমন্বয়ে হয়। এক্ষেত্রে তার যাচাই করার সুযোগ নেই। এখতিয়ারের বাইরে, তার পরেও বর্ডার লাইনে থাকা কিছু কিছু এনআইডি বা জন্ম সনদ অনলাইনে যাচাই করা হয়। তবে এ ব্যাপারে কোন কাগজ পত্রে ত্রুটি থাকলে দলিল লেখক, সনাক্তকারী, এবং সাক্ষীরা দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। তবে কোন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করেন নি বলে জানান তিনি।

মুকসুদপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম জানান, একজন নয় দু’জন নাবালকের সম্পত্তি কিভাবে রেজিস্ট্রি হয় এটা বোধগম্য নয়। এমন অনৈতিক কাজ যদি হয়ে থাকে সেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি খুব জোর দিয়ে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

Loading


শিরোনাম বিএনএ