বিএনএ,চট্টগ্রাম: নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমরা লালদিয়া চরের গৃহহীনদের পুনর্বাসন করব। যারা সচ্ছল তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। এখন যারা আছে তারা ভাড়াটিয়া। বন্দরের আধুনিকায়নে অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ শেষ পর্যায়ে। পৃথিবীর কোনো বন্দরে এত গাড়ি চলে না। এত বস্তিও নেই। এসব বিদেশিদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, লালদিয়ার জায়গা বন্দরের কাজে লাগবে। ওই জায়গা কাউকে ইজারা বা লিজ দেওয়া হবে না। আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। উচ্ছেদ চলমান প্রক্রিয়া। যারা বন্দর এলাকার জমি ব্যবহার করছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। লালদিয়ার চরে ভাড়াটিয়া দিয়ে যারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছে সেই স্বার্থান্বেষীদের তালিকা করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। আমরা একটা জিনিস বলতে চাই- অবৈধভাবে কেউ কোনো কিছু দখল করে রাখার সুযোগ নেই। কেউ যদি অপারগ হয়, কারও যদি কোনো ঠিকানা না থাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তাদের ঠিকানা দেবেন। কিন্তু অবৈধভাবে যারা দখল করে থাকবেন তাদের আমরা উচ্ছেদ করব। শুধু তাই নয়, যারা এতদিন যাবত এগুলো দখল করে রেখে ফায়দা লুটেছেন তাদেরও তালিকা তৈরি করেছি। সময় নিয়ে সেই সব চিহ্নিত অপরাধীদেরও আইনের আওতায় আনব। কিন্তু এ বাংলাদেশের সংবিধান মানুষের যে অধিকার দিয়েছে তা বর্তমান সরকার খর্ব করবে না।
তিনি বলেন, কর্ণফুলীর পাড়ের উচ্ছেদের অগ্রগতি জানাতে মহামান্য আদালত বন্দর চেয়ারম্যানকে কোর্টে হাজির হতে বলেছিলেন। বিষয়টি সবাই জানেন। উচ্ছেদের বিপক্ষে যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনব।
খালিদ মাহমুদ বলেন, কাউকে প্রভাবশালী মনে করছি না। সরকারই প্রভাবশালী। চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকায়ন হোক চট্টগ্রামবাসীও চায়। আপনারা জানেন লয়েডস লিস্টে কন্টেইনার পোর্টে বিশ্বের ৫৮তম জায়গায় নিয়ে গেছি চট্টগ্রাম বন্দরকে। আমরা গ্লোবাল ভিলেজে চলে গেছি। আমাদের আরও জায়গা দরকার। আরও সুস্থ পরিবেশ দরকার। আমাদের করতে হবে। সাংহাইসহ উন্নত বন্দরের সঙ্গে আমরা তুলনা করতে শুরু করে দিয়েছি। গুটিকয়েক মানুষের জন্য বন্দরের সুনাম নষ্ট হবে কেউ তা বরদাশত করবে না। বর্তমান সরকার মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। সংবিধানে মানুষের যে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে।
বে টার্মিনাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি পিপিপি মডেলে হচ্ছে। বন্দর ও দেশের স্বার্থ বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২৫ সাল টার্গেট নির্ধারণ করা আছে। বে টার্মিনাল হবে, গ্রীন পোর্ট হবে।
এ সময় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, সদস্য মো. কামরুল আমিন, সচিব মো. ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর পূর্বের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি লালদিয়ার চরের একাংশে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করার প্রতিবাদে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে মানববন্ধন করেছে লালদিয়ার চরের লোকজন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার লালদিয়ার চর এলাকায় বিমানবন্দর সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সকাল ৯টা থেকে সেখানে ৫০ জনের অধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে, পুলিশ জানিয়েছে পরিস্থিতি শান্ত ছিল। শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার লালদিয়ার চর বিমানবন্দর সড়কে আরও একটি মাবনবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ওই সময় স্থানীয়দের সঙ্গে মানববন্ধনের একাত্মতা প্রকাশ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর মো. ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, সাবেক মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি প্রমুখ।
জানা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে লালদিয়ার এলাকায় বসবাস করে আসছেন প্রায় ২ হাজার ৩০০ পরিবার। সেখানে এ, বি ও সি ব্লকে বিভক্ত হয়ে গঠিত লালদিয়ার চর। ২০০৫ সালের ১২ জুলাই লালদিয়ার চরের একাংশ উচ্ছেদ করে সেখানে প্রায় পাঁচশ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালেও লালদিয়ার চর ঘেঁষেই প্রায় ২০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি লালদিয়ার চরের এ ব্লকের পুরো অংশজুড়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে উচ্ছেদ করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ‘জরিপ অনুযায়ী’চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার লালদিয়ার চরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, র্যাব কমান্ডার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ সব বিবাদীদের রায় বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি সেবা সংস্থাগুলোকেও (ওয়াসা, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস কর্তৃপক্ষ) এ সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে সহসাই অবৈধ দখলদারদের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে সব অবৈধ দখলদারদের অবিলম্বে ওই জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়।
২০১০ সালের ১৮ জুলাই হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন।
বিএনএনিউজ/মনির