27 C
আবহাওয়া
৫:৫৮ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সমন্বয়ক বিরোধ তুঙ্গে!

সমন্বয়ক বিরোধ তুঙ্গে!


বিএনএ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন ইস্যু নিয়ে বিএনপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল নিয়েছে। আর ছাত্রনেতারা উল্টো ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের’ অভিযোগ এনে বিএনপিকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে।

জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার বিষয়ে অনড়। অন্যদিকে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ও উভয়কে খুশি করতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে বিরত রাখার বিষয়টি কৌশলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।

বুধবার সচিবালয়ে এক বৈঠকে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। খসড়ায় বলা হয়েছে অপরাধ সংঘটনের দায়ে রাজনৈতিক দলকে সরাসরি শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এটা ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে, বলেছে সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা ইতিমধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামতকে উপেক্ষা করব না।’

গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। এই ক্ষেত্রে বিএনপি একটা বাধা, রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা প্রতিহত করতে প্রয়োজনে ‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের’ হুমকি দিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই ছাত্রনেতারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করে আসছেন। এরই মধ্যে গত ২৩ শে অক্টোবর আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে বিএনপির সায় পাচ্ছে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এর আগে আওয়ামী লীগের নিয়োগ করা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবিতেও ছাত্রনেতাদের মতো করে বিএনপি সাড়া দেয়নি। রাষ্ট্রপতি ইস্যুকে কেন্দ্র নতুন কোনো সংকট তৈরি হতে পারে, সে আশঙ্কায় দলটি ওই পথে হাঁটেনি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দি হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার আওয়ামী লীগ প্রশ্নে বিএনপির অবস্থানের কথা জানার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। গত মঙ্গলবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সারজিস লেখেন- ‘গণহত্যার বিচারের পূর্বে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান হবে।’

একই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘ছেলেদের রক্তের ওপর পা রেখে দিল্লিকে কেবলা বানিয়ে ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জনগণের মুক্তির নিয়তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য যারা উদ্যোগ নেবে, তাদেরকে ইতিহাস গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে যারা ধারণ করে, যারা গণমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চায়, তারা চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার দাবি ছাড়া আওয়ামী লীগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আর কোনো বক্তব্য দিতে পারে না।’

নাম উচ্চারণ না করলেও এসব বক্তব্য যে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে সেটা অনেকটা স্পষ্ট। এই দুই প্রভাবশালী ছাত্রনেতার এ ধরনের বক্তব্য সরকার ও বিএনপির ওপর এক ধরনের চাপ, বলে মনে করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জামায়াত ইসলামী সমন্বয়কদের পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তার ইঙ্গিত রয়েছে গত মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ছাত্র শিবির সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলামের দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে। তিনি লিখেছেন, ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের জন্য ছাত্র-জনতা জীবন দেয়নি। যারা এই প্রজন্মের পালস বুঝতে পারছেন না, তারা বোকামি করছেন। যারা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন মিশনে নেমেছেন, সাবধান হয়ে যান। রিয়েলি সাবধান হয়ে যান। নতুবা পরিণতি সামাল দিতে পারবেন না’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করতে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিএনপি প্রচন্ড চাপ দিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর চাপ। বিশেষ করে ভারত আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। ফলে আওয়ামী লীগ ইস্যুতে ঘরে বাইরে প্রচন্ড চাপে  চ্যাপ্টা হওয়ার উপক্রম হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ