বিএনএ, ঢাকা : ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম ৬ বছরেও শেষ হয়নি।
ওইদিন রাতে জঙ্গিদের এই বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলায় বিচারিক কার্যক্রম করোনারভাইরাসের কারণে আদালতে বন্ধ থাকায় থেমে থাকে। বর্তমানে আদালতের বিচারিক সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটির ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গোলাম সারোয়ার জাকির বলেন, ‘এই মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ঝুলে আছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে আদালতের সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এখন আবার আদালত খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, মামলার বিচার কার্যক্রম খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। মামলাটির ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত যতগুলো সাক্ষী হয়েছে সবগুলোই আসামিদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। আদালতের কার্যক্রম যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে এ বছরের মধ্যেই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। আমরা চাই দোষীদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রম করোনার কারণে এতদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু আমরাও চাই যেন মামলাটির বিচার কার্যক্রম খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। কারণ বিচার হলে নির্দোষ আসামিরা খালাস পেয়ে যাবে। তার দাবি, এ পর্যন্ত যতজন সাক্ষী দিয়েছে, কেউ আসামিদের নাম বলেননি। এজন্য সাক্ষীদের জেরাও করা লাগেনি। তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা করা হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু এ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে পবিত্র আশুরার মিছিলের প্রস্তুতিকালে তাজিয়া মিছিলে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় উপপরিদর্শক জালাল উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের পুলিশ পরিদর্শক শফিউদ্দিন শেখ ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১০ জঙ্গির নামে চার্জশিট দাখিল করেন। এর পরের বছর ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। ২০১৮ সালের ১৪ মে মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়।
মামলায় আসামিরা হলেন- কবির হোসেন, রুবেল ইসলাম, আবু সাঈদ, আরমান, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাসুদ, শাহ জালাল, ওমর ফারুক, চাঁন মিয়া, জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানা। জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানা কিশোর হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
আসামিদের মধ্যে আরমান, রুবেল ও কবির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী শাহাদাৎ ওরফে আলবানি ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর গাবতলীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় অপর দুই জেএমবি কমান্ডার আবদুল বাকি ওরফে আলাউদ্দিন ওরফে নোমান ও সাঈদ ওরফে হিরণ ওরফে কামাল।
বিএনএ নিউজ/ শহীদুল/এইচ.এম।