26 C
আবহাওয়া
১০:০৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৪, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » সাতকানিয়া পৌরসভার হাতে ডলু নদীর সর্বনাশ!

সাতকানিয়া পৌরসভার হাতে ডলু নদীর সর্বনাশ!

পৌর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পৌরসভার সামিয়ার পাড়া, ভোয়ালিয়া পাড়া, ছমদর পাড়া, ঘাটিয়ার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা এনে ডলু নদীতে ফেলছেন।

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) : দখল দূষণে হুমকির মুখে সাতকানিয়ার বুক চিরে যাওয়া ডলু নদী। অস্তিত্ব হুমকিতে থাকা এই নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলছিল সাতকানিয়া পৌরসভা। পৌরসভার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ময়লা আবর্জনা দীর্ঘদিন ধরে ফেলা হচ্ছিল ডলুব্রিজের মাঝ বরাবর। তবে, মাস খানেক ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোপের মুখে পড়ে ময়লা ফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীর মাঝ বরাবরে পানি প্রবাহে যেমন বাধার সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি নদী ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে অবাধে। অথচ সাম্প্রতিক বন্যা দেখিয়ে গেছে, ডলুর প্রয়োজনীয়তা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, পৌর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পৌরসভার সামিয়ার পাড়া, ভোয়ালিয়া পাড়া, ছমদর পাড়া, ঘাটিয়ার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা এনে ডলু নদীতে ফেলছেন। স্থানীয়দের নিষেধও মানছেন না তারা। কখনো ভোর, কখনো বা ভর দুপুরে ভ্যান ভর্তি ময়লা এনে ফেলছিলেন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৌরসভার এমন কর্মকাণ্ডে সচিত্র তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা কেউ কেউ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ময়লা ফেলতে বাধাও দিয়েছেন। তবুও কানে নেয়নি কেউ। অনেকটা প্রকাশ্যেই নদীর মাঝখানে এনে ফেলা হচ্ছে সব ধরনের ময়লা আবর্জনা। এর আগে সাতকানিয়া ডাকবাংলোর কাছাকাছি কলেজ রোডের একটি ফসলি জমিতে ময়লা আবর্জনা স্তূপ করা হতো। ওই জায়গায় অস্থায়ী মার্কেট ও ভাড়াঘর তৈরি করা হলে সেখানে আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ডলু নদী ও বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা শুরু করে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

পৌর বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে আসছে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। শুরুতে ডলুব্রিজের পূর্বপাশে ময়লা ফেলে স্তূপ করা শুরু করে। পরে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মিত হলে সরাসরি ডলুব্রিজের মাঝ বরাবর উঠে ভ্যান ভর্তি ময়লা ফেলা শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করলে কিছুদিন ধরে ময়লা ফেলা বন্ধ রেখেছে।

পৌর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফেরদৌস রুবেল বলেন, সাতকানিয়ার ঐতিহ্যবহনকারী ডলু নদীতে পৌরসভার বর্জ্য ফেলাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে নদীর নাব্যতা নিয়ে! এক সময় ডলুনদীতে জোয়ার ভাটা দেখা যেত, এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতা এই ডলু নদীর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উপভোগ করতে ডলুব্রিজে বসে সময় কাটাত, সেই ডলুখালটি পৌরসভার বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে! জোয়ার ভাটা তো দূরের কথা ভরা বর্ষা মৌসুমে হাটু পানিও থাকেনা খালে। যেখানে মানুষ একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে ডলুব্রিজে বসে সময় কাটাত সেখানে দুর্গন্ধে নাক বন্ধ করে চলতে হয় জনগনকে। পৌরসভার এই ময়লাগুলো ডলুব্রিজের উপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রেখে পরিবেশ দূষণ করছে। ডলু নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে বর্ষাকালে ডলুখালের স্বাভাবিক পানি চলাচলের গতি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, ফলশ্রুতিতে বন্যার পানি ডলুনদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের মাটির রাস্তাগুলো উপচে গিয়ে ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে। ঘরগুলো ভেঙ্গে গিয়ে দেশের গরীব দুঃখি মানুষ গুলো গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে!স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার একটিই কারণ আর সেটি হল ডলুনদী ভরাট করার ফলে নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।’

সাতকানিয়া পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ডলু নদীতে ময়লা ফেলার কথা না, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিষেধ রয়েছে। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি মেয়রের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেন।

পাওয়া যাচ্ছে না উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির ‘অস্তিত্ব’

নদী রক্ষা কমিশনের হিসেব তথ্যমতে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি থাকার কথা। তবে সাতকানিয়ায় উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দৃশ্যত, এ কমিটির কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহ্বায়ক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদস্য সচিব, পৌর মেয়র, থানার ওসি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন এনজিও, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিকদের সমন্বয়ে ১৯ সদস্যের এই কমিটি থাকার কথা। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এ ধরনের কোন কমিটির অস্তিত্বের বিষয়ে জানা যায়নি।

তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস দখল দূষণ নিয়ে সভা-সেমিনারে বারবার সতর্ক করছেন। সবশেষ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জনপ্রতিনিধিদেরকে নদী দখলকারীদের জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ করে প্রশাসনকে খবর দিতে বলেছেন। তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

এসএমএনকে, এসজ্রিদ্ধ/এইচ এ মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ