বিএনএ, ফেনী : ফেনীর আলোচিত ব্যবসায়ী কায়সার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার প্রধান অভিযুক্ত নিহতের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার নাদিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ফেনীর বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী কায়সার মাহমুদ হত্যা মামলায় এ রায় ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছা।
গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ড. জেবুন্নেছা আজ (২৩ সেপ্টেম্বর) রায়ের দিন ধার্য করেন। সে সময় একমাত্র আসামী নিহতের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার নাদিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিন সকল সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনায় নিহতদের স্ত্রী ও মামলার প্রধান আসামি নাদিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে ড. জেবুন্নেছার আদালত।
রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ বলেন, কায়সার মাহমুদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি কায়সার হত্যা মামলায় শাহনাজ নাদিয়া জড়িত। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ ধরনের রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে কেউ অপরাধ করতে সাহস করবে না।
আসামীপক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল জানান, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নির্ভর করে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা যথাযথ রায় পাইনি। অচিরেই উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। এর আগে গত বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কায়সার হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
তার আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী এ মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ কামরুল ইসলাম খান ও লাশ বহনকারী কন্সটেবল আবদুল মতিনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ মামলার বাদী প্রফেসর আবুল খায়ের, ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। কায়সার হত্যা মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রামপুর ভূইয়া বাড়ি সড়কস্থ নজির সওদাগর বাড়ির প্রফেসর আবুল খায়েরের ছেলে কায়সার মাহমুদের সাথে আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া দৌলতপুর গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে শাহনাজ নাদিয়ার সাথে বিয়ে হয়।
বিয়ের কয়েকমাস পর তাদের মধ্যে মনমালিন্য দেখা দেয়। ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ শাহনাজ নাদিয়া কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন লতিফ টাওয়ারে তার বাবার বাসায় বেড়াতে যায়। ১১ এপ্রিল বিকালে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর জন্য কায়সারদের বাসায় আসে। কাওসারসহ নাদিয়া ডাক্তার দেখানোর জন্য বাসা থেকে বের হয়।
পরে আর কাওসারের বাসায় ফেরা হয়নি। ওইদিন রাতে ফালাহিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানের পাশে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কাওসারকে দূর্বৃত্তরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এসময় তার সাথে তার স্ত্রী নাদিয়াও ছিল। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ময়নাতদন্ত শেষে ১২ এপ্রিল দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ওইদিন রাতে তার পিতা প্রফেসর আবুল খায়ের বাদী হয়ে শাহনাজ নাদিয়া ও তাদের বাড়ির মো. হারুনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর হোসেন বাসা থেকে শাহনাজ নাদিয়াকে গ্রেফতার করে ১৩ এপ্রিল বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী নেয়।
শাহনাজ নাদিয়া ১৬৪ ধারা জবানবন্দীতে কায়সারকে হত্যার কথা স্বীকার করে। সে কায়সারকে একাই হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দী দেয়। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর হোসেন চাঁদপুর বদলি হওয়াতে ২০১৪ সালের ৭ জুন মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই কামরুল ইসলামকে।
এ মামলার অপর আসামী বন্দুয়া দৌলতপুর গ্রামের মৃত মো. হাফেজের ছেলে মো. হারুন একই বছর আগস্ট মাসে দূর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হারুন ও নাদিয়াকে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করে। বাদী প্রফেসর আবুল খায়ের আদালতে আপত্তি জানালে পুনঃতদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।
পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কামরুল ইসলাম নাদিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করে। আদালতের বেঞ্চ সহকারি মো. আলতাফ হোসেন জানান, গত ২৪ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ হওয়ার তারিখ ধার্য করে আদালত। করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বিএনএনিউজ২৪.কম/ নিজাম, আমিন
