বিএনএ, বিশ্বডেস্ক: চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোনো দেশ হিসেবে পা রেখেছে ভারত। পৃথিবীর আর কোনো দেশ সেখানে এখন পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ঐতিহাসিক এই অভিযানের চূড়ান্ত মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচার করছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরো।
বুধবার (২৩ আগস্ট) ভারতের স্থানীয় সময় ৬টায় দেশটির চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ করে চাঁদের মাটিতে।
নির্ধারিত দিনে, বুধবারে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করল চন্দ্রযান-৩। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথা ‘ইসরো’ আগেই জানিয়েছিল, চাঁদের নামার আগের শেষ ২০ মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। গোটা মুন মিশনের কাছে এই কয়েক মিনিটই সব চেয়ে চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে বলে মত ছিল তাদের! দেখা যাচ্ছে, সেই ফাঁড়া কাটিয়ে সাফল্যের মুখ দেখল এই মিশন। ‘ইসরো’র প্রধান বলেছিলেন, চন্দ্রযান-৩-এর সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী।
চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুর গতিপথ ধরে নামে। এর সঙ্গে সঙ্গে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ইসরোর কমান্ড কক্ষে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন বিজ্ঞানীরা। জাতীয় পতাকা হাতে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও।
ভারতের জন্য ঐতিহাসিক এই ক্ষণটি যখন এল—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তখন ব্রিকস সম্মেলনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই নিজের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তিনি।
মোদির এমন উচ্ছ্বাসের যথেষ্ট কারণও আছে। চাঁদে সফল অভিযান পরিচালনা করা সহজ বিষয় নয়। কদিন আগেই রাশিয়ার একটি চন্দ্র অভিযান ব্যর্থ হয়ে গেছে। এমনকি চাঁদের উদ্দেশে ভারতের প্রথম অভিযানটিও ব্যর্থ হয়েছিল। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় দেশটি সফল হয়েছে।
সাফল্য উদ্যাপন করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক ভার্চুয়াল ভাষণে মোদি বলেছেন, আকাশের কোনো সীমা নেই।
কন্ট্রোল রুমে থাকা অভিযাত্রী দলের উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত এখন চাঁদের বুকে। আজ ভারতের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আজকের এই দিনটি ভারতের ইতিহাস চিরদিন মনে রাখবে। এই সাফল্য ভারতকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেবে।
প্রথম অভিযানের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ টেনে নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই দিনটি দেখিয়ে দিল কীভাবে আমরা আমাদের ব্যর্থতা থেকে শিখতে পারি এবং শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারি।
এর আগে ভার্চুয়াল ওই বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারতের সফল চন্দ্রাভিযান শুধু ভারতের একার নয়।
প্রসঙ্গত, চন্দ্রযানটির ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর আজই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণের কথা ছিল। বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ কারণ, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর তথ্য মানবজাতির কাছে এখনও অজানা। তাই চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফল হলে চাঁদের রহস্যময় দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছতে পারা প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস লিখবে ভারত! সেটাই হল। এখনও পর্যন্ত পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে তাদের মহাকাশযান নামাতে পেরেছিল। চন্দ্রযান-৩ সফল হওয়ায় ভারত এই তালিকার চতুর্থ দেশ হল।
গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। শুরুতে চাঁদের দক্ষিণ অংশে অবতরণ করবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। বিক্রম সফলভাবে অবতরণ করতে পারলে তা ‘প্রজ্ঞান’ রোভারকে চাঁদের মাটিতে ছাড়বে। এই রোভারই তখন চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে। আর নতুন সব তথ্য পাঠাতে থাকবে পৃথিবীতে।
বিএনএ/এমএফ