বিএনএ কক্সবাজার: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (২০ আগস্ট) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। আগামি ২৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিনদিন এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। এ তিনদিন আসামিদের উপস্থিতিতে মামলার এক থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেবেন। মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে দিয়েই স্বাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এক বছরের কম সময়ে সিনহা হত্যা মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। ২৭ জুন চার্জগঠন করে ২৬ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করা হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে তা গতি পায়নি।পরিবর্তিত তারিখ অনুযায়ী সোমবার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচারকাজ।বিচার প্রক্রিয়ায় অনুরাগ-বিরাগের সুযোগ নেই বলেও জানান পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
সাক্ষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, সিনহার সঙ্গী সহিদুল ইসলাম সিফাত, টেকনাফের মিনাবাজার এলাকার মোহাম্মদ আলী, শামলাপুর এলাকার মো. আবদুল হামিদ, মো. ইউনুছ, ফিরোজ মাহমুদ, মহিবুল্লাহ, মো. আমিন, মো. কামাল হোসেন ও মো. শওকত আলী, রামু সেনানিবাসের সার্জেন্ট মো. আয়ুব আলী, সিনহার সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথ, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসক শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী ও রনধীর দেবনাথ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের হাফেজ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
যদিও মামলার তদন্ত ও পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে আসামিপক্ষ। প্রভাবমুক্তভাবে বিচার প্রক্রিয়া চলার প্রত্যাশা করেছে তারা।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট নয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় এবং পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১৫।
হত্যাকাণ্ডের পর চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৮৩ জনকে সাক্ষী করে আলোচিত মামলাটির চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।
সিনহা হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
এদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মাসহ ১২ আসামি।
বিএনএনিউজ/আরকেসি