বিএনএ, বশেমুরবিপ্রবি: গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবির সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সহকারী অধ্যাপক আক্কাছ আলীকে চাকরি থেকে স্থায়ী অব্যহতি প্রদানের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে তৃতীয় দিনের মত আন্দোলন করছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
বিভাগটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জামিল রায়হান বলেন, ‘আমরা মনে করি আক্কাছ আলী শিক্ষক হিসেবে থাকার সকল নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তিনি যদি আমাদের বিভাগে আবারও ফিরে আসেন তাহলে আমাদের বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আবারও হুমকির মুখে পড়বে। তাছাড়া যৌন হয়রানি ছাড়াও তিনি একাধিক দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। যেই শিক্ষক নিজেই অসংখ্য অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন, শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করেছেন তিনি আমাদের কি শেখাবেন? আমরা নীতি নৈতিকতাহীন এমন কাউকে আর আমাদের শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই না।’
এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দুই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির জেরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৮ সেমিস্টারের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান আক্কাছ আলীকে।
পরবতীতে জানা যায়, দুই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ছাড়াও একধিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন আক্কাছ আলী। আক্কাছ আলীর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ উভয়ই ছিলো নিয়ম বহির্ভূতভাবে। এমনকি তিনি নিজে চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নিজেই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়ে বশেমুরবিপ্রবির সিএসই বিভাগ থেকে তার মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে মার্ক টেম্পারিং এর অভিযোগও।
এসকল অনিয়ম এবং অভিযোগ নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলে ২০১৯ এর ২১ নভেম্বর ফের ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এর পর ২ বছরের অধিক সময় পার হলেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে এখনও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে। কিন্তু এমন কিছু বিপথগামী শিক্ষকদের জন্যই আজ শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই বিপথগামী শিক্ষকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত যাতে আর কখনোই এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব এবং সিএসই বিভাগের সভাপতি মো. সালেহ আহম্মেদ বলেন, ’তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে আমরা প্রায় দুই বছর পূর্বেই তদন্ত সম্পন্ন করে সকল প্রমাণ সহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এছাড়া বিভাগের পক্ষ থেকেও আমরা একাধিকবার এ বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’
বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বিষয়টি রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উত্থাপন করা হবে।
বিএনএ/ফাহীসুল, এমএফ