বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ ৪৭টি বসতঘর উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার (২৩ জুন) সকাল ১০টায় থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কে খান পাহাড়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ঘরগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইনামুল হাছান ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহমিদা আফরোজ এ অভিযান পরিচালনা করেন। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাসের প্রতিনিধি , চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অভিযানে অংশ নেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইনামুল হাছান বলেন, পাহাড়ের কোনো বাসিন্দাকেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করতে দেবে না জেলা প্রশাসন। তাই কুসুমবাগ এলাকায় পাহাড় থেকে ৫০টির মতো পরিবারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরআগে গত ১৪ জুন পাহাড় ধসের আশঙ্কায় পাহাড় থেকে ৩৭০টি পরিবারের অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। বায়েজিদ লিংক রোডের অংশে ১১০টি, সীতাকুণ্ড অংশে ৭০টি এবং হাটহাজারী অংশে ১৯০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে ২৫টি। এসব পাহাড়ে কম ও বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনের সংখ্যা লাখের ওপরে। বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের। এর মধ্যে ১৮টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। বাকি পাহাড়গুলোর তালিকা এখনও শেষ হয়নি।
পাহাড় ধসে গত ১৫ বছরে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী হতদরিদ্র লোকজন।
বসবাসকারীদের মতে, শহর অঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি ঘরে কম টাকায় থাকতে পারে শ্রমজীবী লোকজন। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগও সহজে মেলে।
২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১১ জন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে নগরীর পাহাড়তলী, সিআরবি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মারা যান আরো ১৫ জন।
২০১১ সালের ১ জুলাই পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৮ জনসহ বাটালি পাহাড়ের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জন মারা যান। ২০১২ সালে ১৭ জুন নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মারা গেছেন। ২০১৩ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ২০১৪ সালে ১ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে ৩ জন এবং ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় মা-মেয়ে মারা যান।
এছাড়া ২০১৬ সালে নগরীতে কেউ মারা না গেলেও সে বছরের ১৩ জুন রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় প্রাণ হারান ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের আকবরশাহের ফিরোজশাহ কলোনিতে ৪ জন মারা যান।
বিএনএনিউজ/মনির