বিএনএ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন অপহরণের শিকার দেলোয়ার হোসেন পাশা (৪৫)। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন তাকে কালো রংয়ের একটি মাইক্রোবাসে যোগে অপহরণ করে বেদম মারধর করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলের লোকজন। সারাদেশে এই ঘটনা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দলীয় চাপ আর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন প্রতিমন্ত্রী পলক। ক্ষুদ্ধ হন খোদ প্রধানমন্ত্রী। সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ জরুরি সভা ডেকে লুৎফুল হাবিব রুবেলকে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর নির্দেশনা সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন।
গত শুক্রবার হাসপাতালে দেলোয়ারকে দেখতে গিয়ে পলক বলেন, এ ঘটনায় তিনি বিব্রত, লজ্জিত, দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। পরে সেদিনই তিনি তাঁর শ্যালককে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। রোববার এক ভিডিও বার্তায় রুবেল বলেন, তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। ফলে রুবেল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে রোববার এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন।
নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিংড়া উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ জানান উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলের পক্ষে দুপুরে প্রত্যাহারপত্র জমা দিয়েছেন তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিনহাজ উদ্দিন। এখন শুধু দেলোয়ার হোসেন পাশাই প্রার্থী থাকলেন। তিনি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দেলোয়ার হোসেন পাশা বলেন, সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগে তার কোন পদ-পদবি নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন তাঁর দীর্ঘদিনের। যদিও আগে কখনো কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। একবার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও দলীয় চাপের কারণে করেননি। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হতে যাওয়ার খবরটি শুনে বেশ খুশি বলে জানান তিনি।
দেলোয়ার দাবি করেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসার সক্ষমতা তাঁর ছিল। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই উপজেলা চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার প্রতিমন্ত্রী পলক হাসপাতালে তাঁকে দেখতে আসায় খুশি হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন দেলোয়ার। ফলে তার মধ্যে এখন আর কোন রাগ ক্ষোভ নেই।
উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সিংড়াকে একটা স্মার্ট ও আধুনিক উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে জানিয়ে বলেন. আমি নিজে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। তাই সিংড়াকে সন্ত্রাসমুক্ত করে গড়ে তুলতে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে লুৎফুল হাবিব রুবেলের লোকজন তাঁকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপরই শুরু হয় মার। তাতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। যখন জ্ঞান ফেরে, তখন দেখেন তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শরীরে এখনো প্রচন্ড ব্যথা রয়েছে। পুরোপুরি সেরে উঠতে আরও কয়েক দিন লাগবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ই মে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। সেখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে তার আম ছালা দুটোই গেল। এলাকার অনেকে এমন ঘটনাকে প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে তীর্যক মন্তব্য করেছেন।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব, ওজি/হাসনা