29 C
আবহাওয়া
৯:২২ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বেনজীরের জমি কেনা তদারকি করতেন ডিআইজি জামিল হাসান?

বেনজীরের জমি কেনা তদারকি করতেন ডিআইজি জামিল হাসান?


বিএনএ, ডেস্ক : বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘অতিরঞ্জিত রিপোর্ট’ আখ্যা দিয়ে এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। ২১শে জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি। এই সংবাদ বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশের ৭ ঘন্টা পরই দৈনিক ইত্তেফাক পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জামিল হাসানের বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে এনেছে।

YouTube player

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আগ্রহে ২০১২ সালে ফরিদপুরের এসপি হিসেবে যোগদান করেন জামিল হাসান। এরপরই মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে ক্ষমতা-প্রভাবও। প্রায়ই তিনি রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের অফিসে ডেকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতেন। মূলত ওই সময়ই তিনি পুরোনো বাড়ি সংস্কারের কাজে হাত দেন। তখন সেই বাড়ি নির্মাণে রড-সিমেন্ট দিতে হয়েছে ফরিদপুরের ঠিকাদারদের।

বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ২০তম ব্যাচে এএসপি হিসেবে জামিল হাসান যোগদান করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চাকরি করেছেন তিনি। ছিলেন ক্ষমতার সর্বোচ্চ মহলের আশেপাশে। চার বছরেরও বেশি সময় তিনি ফরিদপুরের এসপি হিসেবে দাপটের সঙ্গে চাকরি করেছেন। ২০২১ সালে তিনি র‌্যাব- -৮ (বরিশাল) এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে চাকরি করার সময় গোপালগঞ্জে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের জমি কেনাতে তদারকি করেছেন। সে সময়ের পুলিশ প্রধানের বিশ্বস্ত হওয়ার কারণে তার প্রভাব ছিল অনেক বেশি। অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি চরম দুর্ব্যবহার করেছেন।

ডিআইজি জামিল হাসানের ঢাকার রামপুরা ও খিলগাঁওয়ে রয়েছে দুইটি আলিশান ফ্ল্যাট। আছে চারটি বিলাসবহুল গাড়ি। খিলগাঁও আবাসিক এলাকার খিলগাঁও প্রধান সড়কে সি-৫৯৭ নম্বর বাড়িটির নাম কপোতাক্ষ ফজল গার্ডেন। নয় তলা বিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটি ফ্লোরে একটি করে ফ্ল্যাট। ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাট। সাত বছর আগে অ্যাপার্টমেন্টটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এই ভবনের সাত তলার ফ্ল্যাটটিতে জামিল হাসান স্বপরিবারে বসবাস করেন। ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। বিলাসবহুল এই ফ্ল্যাটটি বছর ছয়েক আগে কেনা হয়।

রামপুরা থানার পূর্ব রামপুরার বনশ্রী আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর রোডে ৩০ কাঠা জমির ওপর ১৬ তলা একটি ভবনে মোট ১২৮টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাট ১ হাজার ৮০০ বর্গফুট। ভবনটির নাম পুলিশ পার্ক। ঢাকা পুলিশ পরিবার কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এই ভবনের ফ্ল্যাটের মালিকরা পুলিশ সুপার পদমর্যাদা থেকে তদূর্ধ্ব পদের কর্মকর্তা। এই ভবনে জামিল হাসানের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সমিতির উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে বলে ফ্ল্যাট গ্রহিতাদের মাথাপিছু খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকা। ঐ ভবনটিতে ইতিমধ্যে তিন জন কর্মকর্তা বসবাস করছেন। তবে বেশির ভাগ ফ্ল্যাট পুলিশ কর্মকর্তারা বিক্রি করে দিচ্ছেন। একেকটি ফ্ল্যাট ৩ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে পদোন্নতি পাওয়ার পর দায়িত্ব পান বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে। যদিও তার বাড়ি বরিশাল জেলাতেই। নিজ এলাকায় পোস্টিং হওয়ায় তার দাপট অনেক বেশি। ডিআইজি জামিল হাসানের ডাক নাম শাহীন। এলাকাবাসী তাকে এসপি শাহীন হিসেবেই চেনেন। জামিল হাসানের বাবা বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের একটি মাঠই কিনে ফেলেছেন জামিল হাসান। সেখানে তিনি একটি রিসোর্ট বানানোর কার্যক্রম শুরু করেছেন। অন্তত ৪০ একর অর্থাৎ ১২০ বিঘার মতো জমি তিনি কিনেছেন গত তিন-চার বছরে। আগে এগুলো ছিল ধানি জমি। বর্তমানে ওই জমির একটা অংশ ভরাট করা হয়েছে। বাকি জমি ভরাটের কাজ চলছে। ভরাট করা জমিতে একটি টিন সেড বানানো হয়েছে। সেখানে মুরগি পালন করেন ওই জমির দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মী।

ডিআইজি জামিল হাসানের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামে। অন্তত ৮ থেকে ১০ একর অর্থাৎ ২৪ থেকে ৩০ বিঘার ওপর তার বাড়িটি। চারিদিকে বিভিন্ন ধরনের গাছ। মেইন গেট থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে বাড়ির ভবন।

বাড়িটির মেইন গেইট থেকে ভেতরে তাকালে মনে হয়, এটা কোনো বিলাসবহুল রিসোর্ট। সুন্দর করে ঘাস কাটা, সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। পৈত্রিক বাড়ি হলেও আগে অল্প জায়গায় ছিল বাড়িটি। আশেপাশের জমি কিনে জামিল হাসান বাড়ির পরিসর বাড়িয়েছেন।

ডিআইজি জামিল হাসান হাবিবপুর গ্রামেই বিপুল জায়গায় গড়ে তুলেছেন বিশাল গরুর খামার । কাউকে খামারের কাছে যেতে দেওয়া হয় না। পুরো এলাকা সিসিটিভি দিয়ে ঘেরা। খামারে এখনো ২০০-এর মতো গরু আছে। কোরবানিতে দুই-তৃতীয়াংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে।

হাবিবপুর গ্রামের মূল রাস্তার পাশে অন্তত ১০ থেকে ১২ একর জমিতে তার এই বিশাল গরুর খামার। তার জমিতেই বসিয়েছেন গরুর হাট। বিগত পাঁচ বছর ধরে সপ্তাহে রবি ও বুধবার এ হাটে তার খামারের গরু ছাড়াও স্থানীয়রা গরু বিক্রি করেন। তবে গরু বিক্রি হিসেবে প্রতিটি গরু থেকে তাকে ৫০০ টাকা খাজনা দিতে হয়।

এসব সম্পদের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিআইজি জামিল হাসান বলেন, ‘হাবিবপুরে বাড়িটি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। জমির পরিমাণ ১০ একরের বেশি। বাড়িতে যা কিছু করা হয়েছে, সেগুলো আমাদের বাড়ির সম্পদ দিয়েই। এগুলো আমার বাবা রেখে গেছেন। আর গরুর খামারের জমি আমি ২০০৮ সালে কিনেছি। সেটির পরিমাণও খুব সম্ভবত ৬ একরের মতো হবে।’ এত অল্প সময়ে রিসোর্টের এই বিপুল পরিমাণ জমি কীভাবে কিনেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো রিসোর্ট নেই। রিসোর্টের জন্য আমি কোনো জমি কিনিনি।’ ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাটের ব্যাপারে জানতে চাইলে জামিল হাসান বলেন, ‘ঢাকায় আমার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেটিও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। এর বাহিরে আমার আর কোনো সম্পদ নেই।’

মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এত সম্পদ কীভাবে অর্জন করা সম্ভব? জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তার ‘এটুকু’ সম্পদ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কারণ তারা কাদের রোল মডেল হিসেবে মনে করেন? সাবেক আইজিপি বা পুলিশ কমিশনারকে? তাদের যদি হাজার হাজার বিঘা জমি থাকতে পারে, তাহলে একজন ডিআইজির কেন কয়েকশ’ বিঘা জমি থাকবে না? এখন এটা সিস্টেমের অংশ হয়ে গেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার বা অবৈধ লেনদেন ছাড়া বৈধ উপার্জন দিয়ে এত জমি বা ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়। এগুলো বন্ধ করতে হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ কেনার আগে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নেওয়ার বিধান রাখতে হবে। এছাড়া এগুলো বন্ধ হবে না।’

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ