বিএনএ,ডেস্ক: প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের স্বর্ণ আত্মসাৎ করার জেরে কলকাতায় গত ১৩ই মে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহের খণ্ডাংশের সঙ্গে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিল পেয়েছেন পশ্চিম বঙ্গের চিকিৎসকরা।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এমপি আনারের লাশের টুকরা সনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দেওয়ার জন্য আনারের স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস ও ভাইএনামুলহক ও মেয়ে ডরিন কোকলকাতা পুলিশ নোটিশ প্রদান করে। তবে মেয়ে ডরিনই নভেম্বরের শেষের দিকে কলকাতায় যান। তার কাছ থেকে ডিএন এর দুটি নমুনা নেওয়া হয়। দুটি নমুনাই যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। সেই নমুনা দুটির ডিএনএ মিল পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার এবং তাকে হত্যার মূল সন্দেহ ভাজন আক্তারুজ্জামান শাহীন স্বর্ণ চোরাকারবারের চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন আক্তারুজ্জামান দুবাই থেকে বাংলাদেশে সোনার বার পাচার করতেন এবং সংসদ সদস্য আনার স্বর্ণের চালান ভারতে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতেন। আনার ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের দুটি চালান আত্মাসাৎ করেন। তার জেরেই আনারকে খুন করার জন্য আক্তারুজ্জামানের মালিকানাধীন গুলশান ও বসুন্ধরার দুটি বাড়িতে একাধিক বৈঠক হয়। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে ঢাকায় তারা আনারকে খুন করেনি।’
‘খুনিরা জানতযে এমপি আনার প্রায়ই কলকাতায় যান এবং সেখানে থাকতেন। হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৫শে এপ্রিল কলকাতায় একটি বাসা ভাড়া নেয়। ৩০ শে এপ্রিল আক্তারুজ্জামান, তার বান্ধবীএবং খুনি আমানুল্লাহ একটি ফ্লাইটে কলকাতা গিয়ে ভাড়া করা ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। জাহিদ ও সিয়াম নামে আরও দুজনকে কোকলকাতায় ভাড়া করেন আক্তারুজ্জামান। এরপর হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে, ১০ই মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি।
গত ১২ই মে পশ্চিমবঙ্গে যান ঝিনাইদহের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরদিন ১৩ই মে সংসদ সদস্য আনার তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বের হলে খুনিদের একজন ফয়সালতাকে একটি সাদা গাড়িতে করে নিউ টাউনের ভাড়া করা ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে আনার ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন এবং হত্যাকারীরা পরবর্তী আধা ঘণ্টার মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী এমপি আনারকে হত্যাকরে। হত্যাকারীরালাশটিএমনভাবেটুকরোটুকরোকরেযাতেআনারেরদেহাবশেষহিসেবেশনাক্তকরাকঠিনহয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ই মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে কলকাতায় থাকা আনারের বন্ধু গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। গোপাল জানায় ১৩ই মে তার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন আনার। হত্যাকারীরা অবশ্য এমপি আনারের মোবাইল ফোন চালুরাখে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন জনকে টেক্সট মেসেজ পাঠায়।
১৫ ই মে আমানুল্লাহ ও আক্তারুজ্জামানের বান্ধবী বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর ১৬ মে মুস্তাফিজ এবং ১৭ই মে ফয়সাল দেশে ফেরেন।
২২ শে মে ভারতের সংবাদ মাধ্যম এন ডিটিভির খবরে বলা হয়,কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটিফ্ল্যাটে এমপি আনারকে টুকরো টুকরো করে খুন করা হয়েছে। ঘাতকরা সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে এমপি আনারের মরদেহ টুকরো টুকরো করে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করেন। এ ছাড়া শরীরের হাড় কলকাতার ভাঙ্গরের বাগ জোলা খালের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় তারা। পরবর্তীতে কলকাতা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় চার কেজি মাংস উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য গত ২২শে মে খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলায় বাংলাদেশে গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদভুঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, কাজী কামাল আহমেদ বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী শাজী। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
অপর দিকে এ মামলায় দায় স্বীকার নাকরায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায় ডিবি পুলিশ। গত ৫ই আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে দায়ের হওয়া মামলাটির তদন্তে গতি নেই। তবে কলকাতায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ এবং সিয়াম নামের দু’জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
সৈয়দসাকিব
বিএনএনিউজ টুয়েন্টিফোর/ আরএস