বিএনএ, চট্টগ্রাম: একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও সাহিত্যিক এবং উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি বেগম মুশতারী শফীর মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) রাত পৌঁনে ৯টায় ঢাকা থেকে তার মরদেহ চট্টগ্রামের এনায়েতবাজার এলাকার বাসায় পৌঁছেছে।
উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ রাতে বেগম মুশতারী শফীর মরদেহ বাসায় রাখা হবে। আগামীকাল বুধবার সকালে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নন্দনকাননের শহীদ মিনারে রাখা হবে। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। বেলা ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে চৈতন্য গলির কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এরআগে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মুশতারী শফী। তার আগে তাকে সেখানে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। সোমবার বিকাল চারটার দিকে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। এ ছাড়া বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগও ছিল।
মুশতারী শফীর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি সাত ছেলে-মেয়ে রেখে গেছেন। মুশতারী শফী একাধারে নারীনেত্রী এবং উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে।
বেগম মুশতারী শফী ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। মুশতারী শফী মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে ছিলেন। ’৬০ এর দশকে তিনি চট্টগ্রামে ‘বান্ধবী সংঘ’ নামের একটি নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
তার সম্পাদনায় বান্ধবী নামের একটি পত্রিকাও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় তার চট্টগ্রামের বাসভবনেই হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপসহ প্রগতিশীল নেতা এবং শিল্প সংস্কৃতির ব্যক্তিত্বগণের কর্মকাণ্ড ছিল এই বাসাকে ঘিরে। মুক্তিযুদ্ধে তিনি হারান তার স্বামী ডা. শফীকে। কিন্তু দমে যাননি এই মহিয়সী নারী।
মুশতারী শফী একজন সাহিত্যিক। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’, ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’ এবং ‘চিঠি, জাহানারা ইমামকে’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি লিখেছেন অনেক প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর গল্প গ্রন্থ এবং স্মৃতিচারণমূলক লেখা।
স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ। ২০২০ সালে অর্জন করেন ‘রোকেয়া পদক।’ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তিনি ছিলেন একজন প্রথম সারির সংগঠক ও নেত্রী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চেও তিনি সক্রিয় ছিলেন।
বিএনএ/এমএফ