22 C
আবহাওয়া
৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ড. ইউনূস ‘মব’ জাস্টিস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ!

ড. ইউনূস ‘মব’ জাস্টিস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ!


দুইশত বছর আগ ১৮২৪ সালে আরাকানের ‘মগ’ জাতি ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি করে। তারা কোন ধরনের শাসন-বারন ধার ধরতো না। খুন- ধর্ষন-লুট ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। ফলে আরাকানের আরেক নামকরণ হয় ‘মগের মুল্লুক’।
২ শত বছর পর ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘মব জাস্টিস’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যেন ফিরে গেছে সেই ‘মগের মুল্লুকে’।

YouTube player

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কখনও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক সন্দেহে কখনও বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আবার কখনও চুরির সন্দেহে এসব গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে যেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিছুতেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী কালীন সরকার ‘মব জাস্টিস’ থামাতে পারছে না বরং দিনদিন তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।

১৭ সেপ্টম্বর রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামের ভারসাম্যহীন এক যুবকের ভাত খাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটি ধারণের কিছুক্ষণ পর তাকে পিটিয়ে মারা হয়। তিন দফার গণপিটুনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত; ১৫ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

একইদিন একইভাবে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে তিনি ক্যাম্পাসে গেলে একদল শিক্ষার্থী তাকে ঘিরে ধরে পেটায়।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত শামীমকে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যায়। সেখানেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আবারও তাকে মারধর করে। পরে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাকে সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানেই মৃত্যু হয় শামীমের।

এর আগে গণপিটুনিতে আহত অবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের যন্ত্রণায় কাতরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বলছেন, ‘স্ত্রীর জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। আমি ৫ই আগস্ট মেডিকেলে ছিলাম। আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’

গত ৭ আগষ্ট রাত ১০টার দিকে রাজশাহী বিনোদপুর বাজারে ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় তিনি গণপিটুনির শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মতিহার থানায় পরে বোয়ালিয়া থানায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বোয়ালিয়া থানায় মেঝেতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদের বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরে

সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন মাসুদ।

২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্র শিবির সদস্যরা তার ডান পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, বাম পাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার হাতের রগও কেটে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক গণপিটুনির ঘটনায় হতাহত ঘটনা ঘটেছে।

এ দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গণপিটুনিতে মো. মামুন নামের এক যুবক প্রাণ হারান। এই ঘটনার জের ধরে পরবর্তীতে আরও তিনজন নিহত হয়। পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের এই সংর্ঘষ খাগড়াছড়ি পেরিয়ে রাঙ্গামাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ৫০ জনের মতো আহত হাসপাতালে এসেছে। যাদের মধ্যে অন্তত ৭ জনের অবস্থা গুরুতর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অস্থিশীল পরিবেশ রয়েছে বান্দরবানেও। ফলে তিন পার্বত্য জেলায় অচলাবস্থা শুরু হয়েছে।

২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নাসির ও মুন্না নামের দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত পাঁচই অগাস্টের পর বগুড়া, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী, ঢাকা বরিশাল ও খাগড়াছড়িতে গণপিটুনির ঘটনা ও হামলায় ২৪ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা এর চাইতে আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। অনুচ্ছেদ ৩১ বলছে, এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনামে বা সম্পত্তির হানি ঘটে।

এদিকে গত দুই মাসে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিপীড়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মব জাস্টিস’-এর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক পলাশ বসাক।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রভাষক পলাশ বসাক লেখেন, ‘মব জাস্টিস’-এর মাধ্যমে ৫ আগস্টের আগে এবং পরে সংঘটিত সকল শিক্ষক নিগ্রহের বিরুদ্ধে এটা আমার নীরব প্রতিবাদ।’

তিনি বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র একটি মাত্র মতের মানুষ থাকতে পারবে এমন বন্দোবস্ত যখন করা হয়, তখন সেই প্রতিষ্ঠানকে আপনি আর যা-ই বলুন না কেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ বলতে পারেন না!’

প্রভাষক পলাশ আরও বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর এমন ঢালাও শিক্ষক নিপীড়নের নজির নেই। বিশ্বে অন্য কোনো দেশে এ রকম ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে একের পর এক বির্তকিত করে যাচ্ছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়করা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ‘তুঘলকি’ কান্ড করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন সহ-উপাচার্য হিসেবে মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছে। যা সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে।

এছাড়াও কথিত তৌহিদি জনতার নামে সারাদেশে ভাঙ্গা হচ্ছে একের পর এক আওলিয়া বুর্জগদের মাজার। শুক্রবার বায়তুল মোকারম মসজিদে নতুন-পুরাতন খতিবের দুইপক্ষ সংর্ঘষে লিপ্ত হয়। এই সময় জুতা-সেন্ডেল ও জুতার বক্স নিক্ষেপ করে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
সবমিলিয়ে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার আমল যেন ‘মব জাস্টিস’ নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে মগের মুল্লুকে।

বিএনএ নিউজ,সৈয়দ সাকিব/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ