বিএনএ ডেস্ক: গভীর সমুদ্রে ‘টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মৎস্য আহরণে’ ২০২০ সালের জুনে একটি পাইলট প্রকল্প নিয়েছিল মৎস্য অধিদপ্তর। চলতি বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। মাঝে করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় প্রকল্পের গতি। বৈশ্বিক গতি ফিরলেও মুখ থুবরে পড়ে রয়েছে সরকারের প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। সমুদ্রে টুনা মাছ ধরা তো দূরের কথা, এখনো সমুদ্রে পরিচালনা করা হয়নি কোনো সমীক্ষা।
তিন বছর আগে ‘গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মৎস্য আহরণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রকল্পের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে গভীর সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় অনাহরিত টুনা ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন, টুনা মাছ ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল তৈরি এবং টুনা মাছ আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।
৬১ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের আওতায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উপযোগী তিনটি জাহাজ (ফিশিং বোট) কেনা হবে। টুনা মাছ ও সমজাতীয় মৎস্য আহরণে সাগরে ৬৩টি ক্রুজ পরিচালনা করা হবে। দেশে ১০০ জন মৎস্যশিকারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ৯ জন জেলেসহ মোট ২৬ জনকে শ্রীলঙ্কা ও ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত অর্থবছরে জাহাজ আমদানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রকল্পের মূল কাজগুলো থেমে আছে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক ড. মো. জুবায়দুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাহাজ কেনা স্থগিত ছিল, ফলে আমরা টাকা ছাড় পাইনি। এই জন্য প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেছে। জাহাজ কেনার পর সাগরে গিয়ে দেখব কোথায় টুনা মাছ পাওয়া যায়।’
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কাজের কোনো অগ্রগতি না থাকলেও ঢাকার পাশাপাশি প্রকল্পের চট্টগ্রামেও একটি অফিস রয়েছে। দুই অফিসে নির্দিষ্ট জনবল কর্মরত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জাহাজ ক্রয়ের জন্য ইতিমধ্যে ২১ কোটি টাকার এলসি খোলা হয়েছে। টুনা মাছ আহরণে প্রথম ধাপে দুটি ভেসেল বা জাহাজ আসবে অক্টোবরের শেষ দিকে। চীনে তৈরি হওয়া এই জাহাজ সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিনটি জাহাজ কেনা হচ্ছে ২৮ লাখ ৮৬ হাজার ডলারে। জাহাজ পাওয়ার পর গভীর সমুদ্রে ক্রুজ পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, দেশের সমুদ্রসীমায় ৮ প্রজাতির টুনা এবং ১০ প্রজাতির বেশি সমজাতীয় পেলাজিস মাছ রয়েছে। সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ও চাহিদা থাকা সত্ত্বেও টুনা মাছ আহরণ করতে পারছে না বাংলাদেশের জেলেরা। ২০১৯ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ১৯টি কোম্পানিকে টুনা মাছ ধরার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কোম্পানি এখনো বিনিয়োগ করেনি। কারণ আদৌ মাছ পাবে কি না, সেই শঙ্কা থেকে তারা বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এ অবস্থায় টুনা আহরণে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতেই প্রকল্পটি নেয় সরকার।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষেও যখন টুনা আহরণের প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি নেই, তখন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) অধীনে ‘গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে সক্ষমতা অর্জন, সংরক্ষণ ও বিপণন এবং বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী সাগরের টুনা মাছের ব্যাপক চাহিদা। এই চাহিদাকে মাথায় রেখেই দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে এই মাছ আহরণে বিদেশের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্পও নেই। এছাড়া কোন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান এবং ফ্যাট না থাকায় এই মাছ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ/ এসজিএন/এইচ এ মুন্নী