বিএনএ, কুমিল্লা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান ও উপাধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি গোস্বামী। বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে তারা পদত্যাগ করেন। এর আগে অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষক পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের কোনো রকম সহযোগিতা না করা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার জন্য কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে, পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কলেজের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতিরও অভিযোগ করেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ দুপুরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেন কলেজ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভিক্টোরিয়া কলেজ ডিগ্রি-অনার্স শাখার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করে। এ সময় অধ্যক্ষ আবু জাফর খান ও উপাধ্যক্ষ কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কলেজ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য ১০ মিনিট আল্টিমেটাম দেন ও বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ঢুকে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে কলেজ অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান ও উপাধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি গোস্বামী পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে দেন। এ ছাড়া পদত্যাগের আগে বেলা ১টার দিকে শিক্ষক পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সদ্য শেষ হওয়া ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে। অধ্যক্ষ স্যারকে বারবার বলার পরেও স্যার কোনো ব্যবস্থা নেননি। স্যার জানেন কাজগুলো কারা করেছে, তারপরেও তিনি এটা নিয়ে বাহানা করছিলেন। এ ছাড়া অধ্যক্ষ অনেক দুর্নীতি করেছেন; আমাদের কলেজে যা সবারই জানা। আমরা চাই না এমন অধ্যক্ষ এবং তার সহযোগিরা আমাদের কলেজে থাকুক। এজন্য অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক প্রভাবে ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। যে কারণে শিক্ষার্থীরা সরকার পতনের পর থেকে অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করে আসছিলেন। সবশেষ ২১ আগস্ট বুধবার চূড়ান্তভাবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক পরিষদ পদত্যাগ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা প্রটোকল দিয়ে কলেজের শিক্ষকদের পরিবহনকারী একটি গাড়িতে করে অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষকে কলেজ থেকে বিদায় জানান।
এ বিষয়ে সদ্য পদত্যাগকারী কলেজ অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নিজেও বহু জায়গায় কোটা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। তারপরেও আমি আমার কলেজের সবকিছু ঠিকভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করেছি। প্রতি বছরে অডিট হিসাবেও কোনো গড়মিল কেউ ধরতে পারেনি। তারপর বলব শিক্ষার্থীরা যেহেতু চাচ্ছে আমি পদত্যাগ করি, সেটাই করলাম। সবাই ভালো থাকুক।’
বিএনএনিউজ/ বিএম/ হাসনা