23 C
আবহাওয়া
১১:৫৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গ্রেনেড হামলা বিচার আটকে আছে হাইকোর্টে

গ্রেনেড হামলা বিচার আটকে আছে হাইকোর্টে

গ্রেনেড হামলা বিচার আটকে আছে হাইকোর্টে

।। সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ।।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূলহোতা ও বাস্তবায়নকারী ১৯ জনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ওপর হাইকোর্টে বাধ্যতামূলক ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য প্রায় প্রস্তুত। এর্টনি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ এখন নিম্ন আদালতের ৩ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক নিয়ে কাজ করছে, যেখানে মামলার বিস্তারিত সবকিছু রয়েছে।

এর্টনি জেনারেল বলেছেন, “আমরা আশা করছি ডেথ রোফারেন্স শুনানির জন্য মামলা প্রস্তুত করতে মাত্র একদিন শুনানির পর বাকি পৃষ্ঠাগুলো পড়া শেষ হবে। আমি মনে করি, মামলাটি নিষ্পত্তির জন্যে হাইকোর্টের ১০ থেকে ১২টি শুনানি লাগতে পারে।” তার ধারণা চলতি অক্টোবরের মধ্যে হাইকোর্টের রিভিউ শেষ হতে পারে।

ঢাকার একটি আদালত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এই হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।

তৎকালীন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের এই বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন এবং তার রায়ে হামলার পটভূমি, উদ্দেশ্য ও পরিণতি সম্পর্কে ১২ দফা পর্যবেক্ষণ ছিল।

বিচারিক আদালতের রায় অনুযায়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন যদিও তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তবে তিনি শ্রবনশক্তি হারান।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সমাবেশে এই হামলায় দলের মহিলা শাখার প্রধান এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং প্রায় ৫০০ জন আহত হন।

এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা থাকায় এবং দোষীরাও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করায় রায়টিকে বাধ্যতামূলক আইনি পর্যালোচনার জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যাকে ডেথ রেফারেন্স শুনানি বলা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “দুই সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতির অসুস্থতার কারণে মামলার শুনানি আংশিকভাবে বিলম্বিত হয়, তবে আশা করা যায় একবার বেঞ্চ পুনরায় শুনানি শুরু করলে এতে বেশি সময় লাগবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা (অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়) পুরো রায়টি দেখেছি, একে যথার্থ বলে মনে হয়েছে। আমরা আইনের পয়েন্টগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার পরে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার জন্য আবেদন করব।”

অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মতে, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কর্তৃক মনোনীত বিচারপতি শহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ২০২২ এর  ৫ ডিসেম্বর ডেথ রেফারেন্স এবং দোষীদের আপিলের শুনানির প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আমিন উদ্দিন বলেন, “এখানে আসলে দুটি মামলা রয়েছে; একটি খুন এবং অন্যটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে, দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ চক্রান্তকারীরা সেই নজিরবিহীন আক্রমণের মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল।”

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর প্রধান আসামিরা হলেন- তৎকালীন উপ মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি হুজি-বি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাবেক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি আসামিরা হলেন- জঙ্গি মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ, আবু সাঈদ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের, হোসেন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ, রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ উজ্জল এবং পরিবহন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হানিফ।

এছাড়াও যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।

জঙ্গি শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, আবদুর রউফ, সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান, হাফেজ ইয়াহিয়া, আবু বকর, আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোহাম্মদ ইকবাল, লিটন, শফিকুর রহমান, আবদুল হাই ও রাতুল আহমেদ বাবুকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে হামলাকারীরা ‘আর্জেস’ গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালায়। গ্রেনেড হামলার পরদিন ২০০৪ সালেন ২২ আগস্ট  এ হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়।

ভয়াবহ ওই ঘটনার পর আনীত মামলায় নিরীহ জজ মিয়াকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে মূল ঘটনা ও অপরাধীদের আড়ালের অপচেষ্টা চালায় বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের প্রভাবশালী মহল।

২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেনেড হামলার তদন্ত ফের শুরু করলে হামলার নেপথ্যের অনেক তথ্যই দেশবাসীর সামনে বেরিয়ে আসে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উচ্চপর্যায়ের মদদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইডি ও পুলিশের তখনকার উচ্চ পদস্থ অনেক কর্মকর্তা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে অবহিত ছিল এবং অনেকেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এতে জড়িতও ছিলেন।

সাক্ষ্য প্রমাণে বের হয় যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে বৈঠক করেই এ হামলার পরিকল্পনা করা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার। আবদুল সালাম পিন্টুর ভাই জঙ্গি তাজউদ্দিনের সম্পৃক্ততা এবং আর্জেস গ্রেনেড ঘাতকদের হাতে হস্তান্তর করার তথ্য প্রমাণ বের হয়ে আসে। আসামিদের জবানবন্দীতেই হামলার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের ওই সময়ের পরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও এনএসআইয়ের মহাপরিচালক আবদুর রহিম, জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ও মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), জঙ্গীনেতা তাজউদ্দিন, মাওলানা ফরিদ, মুফতি আবদুল হান্নান (অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), মাওলানা আবদুল সালাম এবং কাশ্মীরী জঙ্গী আবদুল মাজেদ ভাটের নামসহ সংশ্লিষ্ট সব ঘটনা ও জড়িতদের বৃত্তান্ত উঠে আসে।

পুলিশ ২০০৮ সালের  ৯ জুন চার্জশিট দাখিল করে এবং আদালত ২০০৮  এর ২৯ সেপ্টেম্বর আসামিদের অভিযুক্ত করে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)২০১১ সালের ২ জুলাই  আদালতে একটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে এবং আদালত ২০১২ এর ১৮ মার্চ  নতুন চার্জশিটটি আমলে নিয়ে নতুন করে অভিযোগ গঠন করে।

নিম্ন আদালত  ২০১৮ সালের  ২৭ নভেম্বর পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য হাইকোর্টে ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার মামলার রায়সহ নথি প্রেরণ করে

বিএনএ নিউজ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ