বিএনএ, ঢাকা, ২০ আগস্ট ২০২৩ : ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সমাবেশে কয়েকটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। সেই হামলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত ও স্প্লিন্টারের আঘাতে ৩শ’র বেশি জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। আহতদের মধ্যে অনেকের জীবনযাপন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলেও, কানে আঘাত পান।
জঘন্যতম এই হামলার মামলায় সব পক্ষকে বিদ্যমান সব আইনি সুবিধা দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের রায়ের পর এখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য।
এছাড়া রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও অপর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জন
বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। তারা হলেন: সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (সম্প্রতি মারা গেছেন), হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১৯ জন
বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। তারা হলেন: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন
মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকার আমলের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় জামায়াত নেতা মুজাহিদের ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একইসাথে সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় মুফতি হান্নান ও আরেকজন হুজির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সুতরাং, তাদের নাম ওই মামলা থেকে দেয়া হয়।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বোমা বিস্ফোরণের দুই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বর্তমানে ৪৯ জন অভিযুক্ত এবং অনেকের বিচার হচ্ছে। আটজন এখন জামিনে আছেন, আর তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক, আর সাবেক বিএনপি মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদ হয়েছিলেন যারাঃ
আইভি রহমান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
ল্যান্স করপোরাল (অবঃ) মাহবুবুর রশিদ, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের প্রধান
রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ
মোশতাক আহমেদ সেন্টু, সহ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটি
হাসিনা মমতাজ রিনা, সভাপতি, ঢাকা ১৫নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ
সুফিয়া বেগম, কর্মী, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) মহিলা আওয়ামী লীগ
বেলাল হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা ৬৯নং ওয়ার্ড যুবলীগ
লিটন মুন্সী, যুবলীগ নেতা, মাদারিপুর
মোঃ হানিফ, শ্রমিক নেতা, ৩০নং ওয়ার্ড
আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, যুবলীগ কর্মী
আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী
মোমেন আলী, আওয়ামী লীগ কর্মী
জাহেদ আলি আওয়ামী লীগ কর্মী
আবুল কাশেম, আওয়ামী লীগ কর্মী
ইসহাক মিয়া, আওয়ামী লীগ কর্মী
শামসুদ্দিন, আওয়ামী লীগ কর্মী
মামুন মৃধা, ছাত্রলীগ কর্মী, সরকারী কবি নজরুল কলেজ ঢাকা
রতন শিকদার, ব্যবসায়ী
রেজিয়া বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রী
আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, বালুঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ঢাকা
নাসির উদ্দিন সরদার, শ্রমিক লীগ কর্মী
আতিক সরকার, যুবলীগ নেতা
অজ্ঞাত-১
অজ্ঞাত-২
সূত্র : এএলডটঅর্গ
বিএনএনিউজ২৪,জিএন