33 C
আবহাওয়া
৬:০৮ অপরাহ্ণ - জুন ২১, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » যুদ্ধ ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছে ইসরায়েল

যুদ্ধ ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছে ইসরায়েল


১৩ জুন শুক্রবার ভোররাতে হামলা চালিয়ে ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ছাড়া হামলায় দেশটির কিছু পারমাণবিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জবাবে ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। এতে দুই পক্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এই সংঘাতের কারণে নজিরবিহীন চাপ বাড়ছে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে।

YouTube player

ইরানে হামলার আগে ২০২৩ সালে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। সেখানে যুদ্ধ চলমান। এরই মধ্যে ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনা দেশটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সংঘাতের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

ইসরায়েলের বাণিজ্যিক পত্রিকা ক্যালক্যালিস্ট ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, শুধু গাজা যুদ্ধেই ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ইসরায়েলের মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭০৫ কোটি মার্কিন ডলার।

গত ১৫ জুন ইসরায়েলের গণমাধ্যম ওয়াই নেট নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর মাত্র দুই দিনেই ইসরায়েলের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪৫ কোটি মার্কিন ডলার। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে তা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ গাজা যুদ্ধের ব্যয়কে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গত আট দিনে প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। আর এসব ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েলকে ব্যয় করতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।ইরানি হামলার অর্থনৈতিক প্রভাব ইসরায়েলি-অধিকৃত শহরজুড়ে অনুভূত হচ্ছে।

ইসরায়েলি সংবাদপত্র মারিভ স্বীকার করেছে, তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে অর্ধেকেরও বেশি দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রতিবেদনটি শহরের বাজারগুলোকে “ফাঁকা ও নিস্তব্ধ” হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক অচলাবস্থার প্রতিফলন।

ওয়াল স্ট্রিচ জার্নালের মতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরায়েল যে ‘ইন্টারসেপ্টর’ ব্যবহার করছে, তাতে প্রতিদিন ১ কোটি থেকে ২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে ইসরায়েলের।

তারপরও বহু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারেনি ইসরায়েল। সেসব ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরের বহু স্থাপনা ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মেরামত করতে ভবিষ্যতে ইসরায়েলের ব্যয় হবে অন্তত ৪০ কোটি ডলার।

ব্যাংক অব ইসরায়েলের সাবেক গভর্নর কার্নিট ফ্লাগ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘যুদ্ধ যদি দুই সপ্তাহ বা এক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়, তাহলে পরিস্থিতি বদলে যাবে। এতদিন পর্যন্ত যুদ্ধ টেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্প থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ইরানের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে ইসরায়েল ‘ডেভিডস স্লিং’ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ব্যবস্থাকে একবার সক্রিয় করতেই খরচ হয় প্রায় ৭ লাখ মার্কিন ডলার।

তেল আবিবের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ়ের প্রবীণ গবেষক ইয়েহোশুয়া কালিস্কি বলেন, ‘দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইসরায়েলের ‘অ্যারো–৩’ ব্যবস্থা রয়েছে। তাতে প্রতি ‘ইন্টারসেপ্টর’ ব্যবহারে খরচ হয় ৪ কোটি মার্কিন ডলার। এ ছাড়াও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উড়াতেও প্রতি ঘণ্টার ১০ হাজার ডলার করে খরচ হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় জ্বালানি এবং বোমার খরচ।’

ইসরায়েলের রেইখম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জ়ভি একস্টেইন বলেন, ‘গাজা বা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যত খরচ হচ্ছিল, তার চেয়ে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে প্রতিদিন বেশি খরচ হচ্ছে ইসরায়েলের।’

১৭ জুন মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি বা ঋণমাণ নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস ইসরায়েলের অর্থনীতির দুর্বলতা নিয়ে একটি সতর্কতা জারি করেছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে—বিশেষ করে ইরান দীর্ঘমেয়াদি ও কৌশলগতভাবে পাল্টা হামলা চালাতে থাকলে ইসরায়েলের ক্রেডিট রেটিং ‘এ’ থেকে ‘এ মাইনাসে’ নামিয়ে আনা হতে পারে। এর ফলে ঋণের খরচ বেড়ে ইসরায়েলি অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যেতে পারে।

ব্যবসায়িক জরিপ সংস্থা CofaceBDI-এর মতে, জনবলের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাঘাত এবং ব্যবসায়িক মনোভাবের অবনতির কারণে ২০২৪ সালে প্রায় ৬০,০০০ ইসরায়েলি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও, পর্যটকদের আগমন অনেক কমে গেছে।সামনে এই প্রবণতাগুলি আরও তীব্র হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের হিসেবে কিছু ভুল ছিল। ভেবেছিল টার্গেট কিলিং করে সহজে ইরানকে পরাস্ত করা যাবে। কিন্তু ইরান যেভাবে জবাব দেয়া শুরু করেছে তাতে ইসরায়েলিরা আতঙ্কিত। কঠিন সব আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানছে ইসরায়েলে। প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে। বড় ধরণের ক্ষতি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার।

ইরানের জবাব দেখে অনেকটায় দিশেহারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।জনগণের সামনে নিজের ক্ষতির কথা তুলে ধরে আবেগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন নেতানিয়াহু।

বিয়ের শেভার সরোকা হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পটভূমিতে নেতানিয়াহু বলেন, “আমার ছেলের বিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পেছাতে হয়েছে। আমার স্ত্রী এবং ছেলের বাগদত্তাও এই পরিস্থিতিতে খুব কষ্ট পেয়েছেন। আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধের ক্ষতি বইছি।”

তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। তার এই বক্তব্যকে ‘অনুভূতিহীন’ ও ‘নিজস্ব প্রচার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বহু রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষ।

ক্নেসেট সদস্য গিলাদ কারিভ বলেন, “অনেক পরিবার আছে, যাদের সন্তানরা আর কখনোই বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে না। তারা আর জীবিত নেই।”

বিশ্লেষকরা একটা বিষয়ে একমত এ যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চললে ইসরায়েলের অর্থনীতি বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বে যা থেকে উঠা অনেকটাই কঠিন হবে।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ