বিএনএ, স্পোর্টস ডেস্ক : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে বাংলাদেশের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শুক্রবার অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪০ রান করে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে ২৮ বলে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন তাওহিদ হৃদয়। বল হাতে এ ম্যাচে হ্যাট্টিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স। জবাবে ১১ দশমিক ২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর বৃষ্টির কারণে তৃতীয়বারের মত খেলা বন্ধ হয়। তখন বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে এগিয়ে ছিলো অসিরা। এমন অবস্থায় আর খেলা মাঠে না গড়িয়ে বৃষ্টি আইনে ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়।
ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদ হাসান। দলের রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেন তানজিদ। চলতি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের একটিতেও বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি দুই অংকের কোটা স্পর্শ করতে পারেনি।
শুরুতেই উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার লিটন দাস ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দু’জনের জুটিতে পাওয়ার প্লেতে ৩৯ রান পায় বাংলাদেশ। অষ্টম ওভারে বাংলাদেশের রান ও জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়। পরের ওভারে স্পিনার এডাম জাম্পার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন ২টি চারে ২৫ বলে ১৬ রান করা লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সাথে ৪৮ বলে ৫৮ রান যোগ করেন লিটন।
লিটনের বিদায়ে পিঞ্চ হিটার হিসেবে চার নম্বরে নেমে ২ রানে আউট হন রিশাদ হোসেন। কিছুক্ষণবাদে এ অবস্থায় উইকেটে সেট হয়ে সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক শান্ত। জাম্পার বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে লেগ বিফোর আউট হন তিনি। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪১ রান করেন শান্ত।
১৩তম ওভারে দলীয় ৮৪ রানে শান্তর বিদায়ের পর জুটি গড়ার চেষ্টায় বেশি দূর যেতে পারেননি তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান। দলের রান ১শ পার হবার পর টি-টোয়েন্টি এক নম্বর অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিসকে বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১০ বলে ৮ রান করা সাকিব।
প্যাট কামিন্সের করা ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে মাহমুদুল্লাহ ২ এবং জাকের আলির পরিবর্তে খেলতে নামা মেহেদি হাসান শূণ্যতে আউট হন। এতে হ্যাট্টিকের সুযোগ তৈরি হয় কামিন্সের। ২০তম ওভারের প্রথম বলে হৃদয়কে শিকার করে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া কামিন্স।
দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাট্টিক করলেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বোলার হিসেবে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাট্টিক করেছিলেন পেসার ব্রেট লি। সেটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি সপ্তম হ্যাট্টিক।
২টি করে চার-ছক্কায় বাংলাদেশের পক্ষে ২৮ বলে ৪০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন হৃদয়। শেষ দিকে তাসকিন আহমেদের ৭ বলে অপরাজিত ১৩ রানে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪০ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার কামিন্স ২৯ রানে ৩টি, জাম্পা ২৪ রানে ২টি উইকেট নেন।
১৪১ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট তুলে নিতে পারতো বাংলাদেশ। পেসার তানজিম হাসান সাকিবের করা ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেন হৃদয়। ৫ রানে জীবন পেয়ে সতীর্থ ট্রাভিস হেডকে নিয়ে ঝড় তোলেন ওয়ার্নার। পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রান যোগ করেন তারা। সপ্তম ওভারে শুরু হয় বৃষ্টি। প্রায় ৩০ মিনিট বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হলে, প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২১ বলে ৩১ রান করা হেডকে বোল্ড করেন রিশাদ।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শকে ১ রানে লেগ বিফোর আউট করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন রিশাদ। ৪ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অসিরা।
৬৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে দ্রুত রান তুলতে থাকেন ওয়ার্নার ও ম্যাক্সওয়েল। ১৫ বলে ৩১ রান তুলে ফেলেন তারা।
১২তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। এরপর আবারো বৃষ্টি নামলে বন্ধ হয় খেলা। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ১১ দশমিক ২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান। এমন অবস্থায় বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে এগিয়ে ছিলো অসিরা। এরপর বৃষ্টির মাত্রা আরো বেড়ে গেলে খেলা সম্ভব না হওয়ায় বৃষ্টি আইনে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ওয়ার্নার ৩৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ১টি করে চার-ছক্কায় ৬ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল। বাংলাদেশের রিশাদ ২৩ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪০/৮ (তানজিদ ০, লিটন ১৬, শান্ত ৪১, রিশাদ ২, হৃদয় ৪০, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ২, মেহেদি ০, তাসকিন ১৩*, তানজিম ৪*; স্টার্ক ৪-০-২১-১, হেইজেলউড ৪-১-২৫-০, কামিন্স ৪-০-২৯-৩, জ্যাম্পা ৪-০-২৪-২, স্টয়নিস ২-০-২৪-১, ম্যাক্সওয়েল ২-০-১৪-১)
অস্ট্রেলিয়া: ১১.২ ওভারে ১০০/২ (ওয়ার্নার ৫৩*, হেড ৩১, মার্শ ১, ম্যাক্সওয়েল ১৪*; মেহেদি ৪-০-২২-০, তানজিম ১-০-৯-০, তাসকিন ১.২-০-২২-০, মুস্তাফিজ ২-০-২৩-০, রিশাদ ৩-০-২৩-২)
ফল: ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়া ২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: প্যাট কামিন্স
আগামীকাল সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম/ হাসনা