24 C
আবহাওয়া
১০:২৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ভারতে বারবার স্থান বদল এমপি আজিমের!

ভারতে বারবার স্থান বদল এমপি আজিমের!


বিএনএ ডেস্ক : ঝিনাইদহের নিখোঁজ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের খোঁজ রহস্য  এখনো উদঘাটন করা সম্ভব  হয়নি। ফলে এই সংসদ সদস্যের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়ে ভারত সরকার নিশ্চিত কোন তথ্য  বাংলাদেশ সরকারকে দিতে পারেনি।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করেছে। তারা জানতে পেরেছে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনো জায়গায়।

YouTube player

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ, এমনটাই জানিয়েছেন উপ-দূতাবাসের এক কর্মকর্তা; যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।

কলকাতার উত্তর শহরতলি বরাহনগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আজিম, সেই গোপাল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ১৩ মে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে ভাড়া করা গাড়িতে উঠেছিলেন আজিম, সেটির চালকের সন্ধান পেয়েছে বলেই স্থানীয় পুলিশের তরফে তাকে জানানো হয়েছে।

বিশ্বাস বলেন, পুলিশের কাছে আমি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলাম। তারা ওই গাড়িটি খুঁজে বের করে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই চালক নাকি পুলিশকে জানিয়েছেন, সংসদ সদস্যের সঙ্গে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। এদের দুজনকে তিনি কলকাতা সংলগ্ন নিউ টাউন এলাকায় ছেড়ে দেন ১৩ মে।

উপ-দূতাবাসের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস সচিব রঞ্জন সেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সংসদ সদস্যের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের শনিবার জানানো হয়। তারপরই আমরা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা খোঁজখবর করছেন এমনটাই আমাদের জানানো হয়েছে।

আবার শেষবার যেহেতু নিখোঁজ সংসদ সদস্যকে কলকাতায় দেখা গিয়েছিল, তাই কলকাতা পুলিশের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস- এমনটাও জানা গেছে।

কলকাতার সিঁথি অঞ্চলের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস বলছিলেন আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।

বিশ্বাস বলেন, এবারে তিনি এসে আমাকে বলেছিলেন যে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। কোন ডাক্তার ভালো হবে জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার জানাশোনা কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। তাই আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সল্ট লেকের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন। আমরা একসঙ্গে সকালের জলখাবার খেয়েছিলাম। তারপর এটাও তাকে বলেছিলাম যে আমার গাড়ি সেদিন নেই, উনি যেন গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেন। এরপর আমি বাড়ির একতলায় অফিসে চলে আসি।

গোপাল বিশ্বাস বলেন, এরপর আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুরে বের হওয়ার সময়ে আমাকে বলে যান যে তিনি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন। তার খোঁজ না পাওয়ার পরে আমি যখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখি, তখন জানতে পারি যে উনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে।

বরাহনগর থানায় যে নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন গোপাল বিশ্বাস সেখানে তিনি লিখেছেন- তার বাড়ির অদূরে বিধান পার্ক এলাকা থেকে ভাড়ার গাড়িতে ওঠেন আনোয়ারুল আজিম। তাকে গাড়িতে উঠতে দেখেছেন, এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথাও পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়িতে ফিরে আসার কথা থাকলেও সেখানে ফেরেননি আজিম। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠান তিনি- ‘বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করব, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।’ এ ঘটনা ১৩ মে’র।

কলকাতার গোপাল বিশ্বাসের গহনা রফতানির ব্যবসা আছে। তিনি জানান, দুই আড়াই দশকের বন্ধুত্ব সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিএনপির জমানায় ও ভারতে থাকত। আমাদের বাড়ি মাঝদিয়ায়। সেখানে সুভাষ আগরওয়ালের বাড়িতে থাকত আনার। আমার সঙ্গে সেখানেই পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব। সম্পর্কটা এখন পারিবারিক স্তরে চলে গেছে। সে কারণেই চিকিৎসা করাতে এসে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজিম।

সেদিন দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আজিম যে ভাড়াচালিত গাড়িতে উঠেছিলেন সেটির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

এরপর গোপাল বিশ্বাসকে পুলিশ জানিয়েছে, আজিমের সঙ্গে আরেকজন বাংলাদেশি নাগরিককে নিউ টাউন অঞ্চলে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই চালক।

এরপর ১৫ মে সকালে গোপাল বিশ্বাস আজিমের কাছ থেকে আবারো একটি হোয়াটস্অ্যাপ মেসেজ পান যে- তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং তার সঙ্গে ‘ভিআইপিরা’ আছেন, তাই তাকে যেন ফোন না করা হয়। এর দুদিন পর ১৭ মে গোপাল বিশ্বাসকে আজিমের মেয়ে ফোন করে জানান যে, তার বাবার সঙ্গে কিছুতেই তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না।

বিশ্বাস বলেন, সে খবর জানতে পেরে কলকাতায় ওর যত ঘনিষ্ঠ মানুষ আছেন বলে আমি জানি, সবাইকে বিষয়টা জানাই। তারাও খোঁজখবর করতে শুরু করেন; কিন্তু কোনোভাবেই আজিমকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরের দিন ১৮ মে বরাহনগর থানায় যান তিনি।

বিশ্বাস বলেন, সেখানে আমাকে সারাদিন বসিয়ে রাখা হয়। পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সেসব খতিয়ে দেখে আমার নিখোঁজ ডায়েরি নেওয়া হয়। তারা ওই ভাড়ার গাড়িটির নম্বরও পেয়ে যায়। চালকের সঙ্গে কথা বলেছে। নিশ্চয়ই পুলিশ খোঁজখবর করছে, আমাকে তো আর সব তথ্য জানাচ্ছে না।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস যে তথ্য পেয়েছে, তা অনুযায়ী ১৭ মে আজিমের মোবাইল নম্বরটি কিছুক্ষণের জন্য বিহারে অবস্থান করছিল।

অন্যদিকে ঢাকায় ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার দুটি বাংলাদেশি নম্বর আছে আর একটি ভারতের নম্বর। আমরা ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় তার ভারতীয় নম্বরটি দেখলাম মুজাফফরাবাদ অর্থাৎ বিহারের দিকে।

ঘটনাচক্রে বিহারে মুজাফফরাবাদ নামের জায়গা নেই। পাকিস্তান শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানীর নাম মুজাফফরাবাদ, আর প্রায় কাছাকাছি যে নামের জায়গা বিহারে আছে, সেই জায়গার নাম মুজাফফরপুর।

ডিবি প্রধান জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টার খোঁজখবর রাখছি। ভারতের যারা বাংলাদেশে আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, আবার ভারতীয় পুলিশের সঙ্গেও কথা বলছি। উনার পরিবারও যোগাযোগ রাখছে আমাদের সঙ্গে। তার মেয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন।

ডিবি কার্যালয়ে বাবার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জমা দিয়েছেন সংসদ সদস্যের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি সাংবাদিকদের জানান যে তিনি নিজেই ভারতে যাচ্ছেন বাবার খোঁজখবর করতে।

ডরিন বলেন, আমরা তো ভারতে মাঝে মাঝেই যাই। পার্লামেন্ট যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে, তাই দু-তিন দিনের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। এ রকম রেগুলারই তিনি যান। উনার কানে একটা সমস্যা আছে, একটা কান পুরোই বন্ধ হয়ে গেছে। সেটি চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব/ হাসনা

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ