22 C
আবহাওয়া
১:৪৬ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৬৯ (পাবনা-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৬৯ (পাবনা-২)

পাবনা-২

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে পাবনা-২ আসনের হালচাল।

পাবনা -২ আসন
পাবনা-২ সংসদীয় আসনটি সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং বেড়া উপজেলার আংশিক (৫টি ইউনিয়ন) নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৬৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ওসমান গনি খান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ৮ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২১ হাজার ৮ শত ৪০ জন। নির্বাচনে বিএনপির ওসমান গনি খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৪ শত ৩১ ভোট।। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আহমেদ তফিজ উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৮৬ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির একেএম সেলিম রেজা হাবিবকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। নির্বাচনে বিএনপির একেএম সেলিম রেজা হাবিবকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আহমেদ তফিজ উদ্দিন বিজয়ী 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪ শত ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৭ শত ৮৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আহমেদ তফিজ উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ২ শত ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সেলিম রেজা হাবিব । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৭ শত ৪৫ ভোট। ১৯৯৮ সালের জুন এ আহমেদ তফিজ উদ্দিন মারা যান। ডিসেম্বরের উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আবদুল করিম খন্দকার নির্বাচিত হন।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬ শত ৭৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮ শত ৫২ জন। নির্বাচনে বিএনপির এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ৭ শত ৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মির্জা আব্দুল জলিল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ১৩ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল করিম খন্দকার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৭ শত ৭৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল করিম খন্দকার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৬ হাজার ৭ শত ৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার আজিজুল হক আরজু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার আজিজুল হক আরজু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবির বিজয়ী
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭ শত ৮৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৮ শত ৩২ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবির, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব। হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আলী, ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী শামশুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবির বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪২ হাজার ৬ শত ৮১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫ হাজার ৩ শত ৮৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পাবনা- ২ (সুজানগর উপজেলা এবং আমিনপুর থানা) সংসদীয় আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর পাবনা-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৬৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৪৭%, বিএনপি ৫৫.৩৪%, জাতীয় পার্টি ০.৭৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৪৪% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.০৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৭৭%, বিএনপি ৪৬.৭০%, জামায়াতে ইসলামী ২.৮৩%, জাতীয় পাটি ১.৭৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৪৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.৫৩%, ৪দলীয় জোট ৫২.৮৬%, জাতীয় পার্টি ০.৫৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.০৬% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৬৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৪.৮০%, ৪ দলীয় জোট ৪৪.৬০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৬০% ভোট পায়।
পাবনা- ২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবির। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির নির্বাচনী এলাকায় ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্থায়নে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও যোগাযোগ বেশ ভালো।
এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান উজ্জল। আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আশিকুর রহমান খান সবুজ, আব্দুল আজিজ খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল মতীন, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা খন্দকার জাহাঙ্গীর কবির রানা, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম সাজ্জাদ।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাবনা-২ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে গত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে চারবার আওয়ামী লীগ ও দুবার বিএনপি জয়লাভ করে। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি টানা নিজেদের দখলে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তকোন্দল রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৬৯ তম পাবনা-২ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ