বিশ্ব ডেস্ক: দিল্লি হাইকোর্ট আবগারি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা দিতে অস্বীকার করার কয়েক ঘণ্টা পরে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
বৃহস্পতিবার(২১ মার্চ) রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে দুই ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদশেষে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ঘোষণা দেয়া হয়। সেখানে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) প্রতিরোধ আইনে আম আদমি পার্টির প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডির কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, আবগারি ‘দুর্নীতি’ মামলায় পর পর ৯ বার সমন পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল ইডি। কিন্তু তিনি প্রতিবারই হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন। দিল্লি হাইকোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল ইডি। সেখানে দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর অরবিন্দকে গ্রেফতার করা হয়। পদে থাকাকালীন এই প্রথম ভারতের কোনও মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হলেন। অরবিন্দের গ্রেফতারের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সরকারের আমলে আবগারি নীতি বদলে ফেলে কয়েকটি সংস্থাকে বেআইনি ভাবে সুযোগ পাইয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে দীর্ঘদিন আগে । গত বছরই বিতর্কিত এই আবগারি নীতি বাতিল করার কথা ঘোষণা করে দিল্লির আপ সরকার। তার আগেই এ নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা। এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে নাম ছিল দিল্লির তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীষ সিসৌদিয়া এবং সাংসদ সঞ্জয় সিংহের। পরে অরবিন্দের নামও জড়ায় এই মামলায়।
শুক্রবার পিএমএলএ আদালতে হাজির
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে শুক্রবার পিএমএলএ আদালতে হাজির করানো হবে। এই আদালতে আর্থিক তছরুপের মামলাগুলিই ওঠে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন জানাবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করে ইডির সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
যেভাবে কেজরিওয়াল এর উত্থান
আম আদমী পার্টি অর্থাৎ, “সাধারণ মানুষের পার্টি”; সংক্ষেপে “আপ”)। ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে জন লোকপাল বিল পাস করানো নিয়ে দুই বিশিষ্ট দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনকর্মী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও অন্না হাজারের মধ্যে জনপ্রিয় “ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন” আন্দোলনের রাজনৈতিকীকরণ নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই দলের জন্ম হয়। অন্না হাজারে উক্ত আন্দোলনটিকে রাজনৈতিক পথে পরিচালিত করার বিরোধী ছিলেন। অন্যদিকে কেজরিওয়াল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন চালানোর পক্ষপাতী ছিলেন।
আপের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দল বিভিন্ন প্রতিবাদ আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেয়। দিল্লিতে বিদ্যুৎ ও জলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে বেআইনি আঁতাতের অভিযোগ এনে আপ আন্দোলন চালায়। এছাড়া যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণের শিকার মহিলাদের সুবিচার দেওয়া ও শক্তিশালী ধর্ষণ-বিরোধী আইন প্রণয়ন ছিল এই দলের অন্যতম এজেন্ডা। ২০১৩ সালে এই দল দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দিল্লি বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে আপ পায় ২৮টি আসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে এই দল দিল্লিতে সরকার গঠন করে।
সূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার, ইন্ডিয়া টাইমস।
এসজিএন/হাসনা